সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা সত্ত্বেও কেন পৃথিবীতে এত গরম?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৫, ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম

সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা সত্ত্বেও কেন পৃথিবীতে এত গরম?

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৫৫ মিনিটে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথে সবচেয়ে দূরবর্তী বিন্দুতে পৌঁছায়, যাকে বলে অ্যাফেলিয়ন (Aphelion)। এ সময় পৃথিবী সূর্য থেকে প্রায় ৯৪.৫ মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করছিল।

এই দূরত্ব সত্ত্বেও উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে এই মুহুর্তে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ পৃথিবীর কক্ষপথের দূরত্ব নয়, বরং এর ২৩.৫ ডিগ্রি কাত হওয়া।

এই কাত হওয়ার কারণেই বছরে বিভিন্ন সময় পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অংশে সূর্যের আলো বেশি বা কম পড়ে, যা ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ।

পৃথিবীর কক্ষপথ পুরোপুরি গোলাকার নয়, বরং সামান্য ডিম্বাকার। প্রতি বছর জানুয়ারির শুরুতে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে (perihelion) পৌঁছে, আর জুলাইয়ের শুরুতে সবচেয়ে দূরে (aphelion)।

দূরত্বের পার্থক্য আনুমানিক ৩.১ মিলিয়ন মাইল হলেও এটি গড় দূরত্বের মাত্র ৩.৩ শতাংশ। এর ফলে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসা সৌরশক্তির পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ কমে, যা তাপমাত্রা নির্ধারণে খুব একটা প্রভাব ফেলে না।

অন্যদিকে, জুলাই মাসে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে, ফলে দিনের সময় দীর্ঘ হয়, সূর্যের কিরণ প্রায় সরাসরি মাটিতে পড়ে এবং এর প্রভাবে তাপমাত্রা অনেক বেশি হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত হিউস্টন, নিউ অরলিন্স এবং ফিনিক্স শহরগুলোতে গ্রীষ্মে যে পরিমাণ সৌরশক্তি পাওয়া যায়, তা শীতকালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের শহরগুলোর ক্ষেত্রে (যেমন: নিউইয়র্ক, ডেনভার, কলম্বাস) পার্থক্য আরও প্রকট। এসব শহরে শীতকালে যেখানে প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১৪৫ ওয়াট সৌরশক্তি পাওয়া যায়, গ্রীষ্মে তা বেড়ে প্রায় ৪৩০ ওয়াটে পৌঁছে — যা প্রায় ৩০০% বৃদ্ধি।

অতএব, সূর্য থেকে দূরত্ব নয়, বরং পৃথিবীর সূর্যের দিকে কাত হয়ে থাকার কারণেই গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা এত বেশি হয়। একই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকায় সেখানে তখন শীতকাল থাকে।

পৃথিবীর আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ হলো এর কাত হওয়া। সূর্য থেকে কয়েক মিলিয়ন মাইল দূরে থাকার চেয়ে এ সামান্য কাতই পৃথিবীর তাপমাত্রায় বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করে।

Link copied!