বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আইনের অস্পষ্টতা অনেক সময়ই সাধারণ মানুষের হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর এই অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নাগরিকদের ওপর নিপীড়ন চালায়।
তিনি বলেন, আইনে যদি এমন অস্পষ্টতা থেকে যায়, যার ফলে জনগণ ভোগান্তিতে পড়ে, তাহলে সেই অস্পষ্টতা দূর করার দায়িত্ব আইনপ্রণেতাদের।
শনিবার রাজধানীর ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটির মূল আলোচ্য বিষয় ছিল—‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ আদৌ কতটা সুরক্ষা দেয়’।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। আগের আইনে যাঁরা শাস্তি পেয়েছেন, তাঁরা হয়তো কিছুটা ছাড় পাবেন, কিন্তু একই ধরনের বিধান নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে একই অভিযোগে আবারও গ্রেপ্তারের সুযোগ থাকছে। এটা চরম অযৌক্তিক।”
তিনি আরও বলেন, আইন মানুষের জন্য করা হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেটা আদৌ বুঝতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই এসব আইন সাধারণ মানুষকে জানানো ও বোঝানোর দায়িত্ব রাজনীতিক, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের।
আইন প্রয়োগের নামে যাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন ও জনগণের ওপর নিপীড়ন চালান, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে, অথচ সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে সেখানে কোনো আলোচনাই হয়নি।”
সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অধ্যাদেশের ৩৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের যে বিধান রয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। যদিও সরকার দাবি করছে যে বিধানটি আগের মতো উন্মুক্ত নয় এবং সীমিত করা হয়েছে, তবুও বাস্তবে পুলিশ কোনো সীমাবদ্ধতা মানে না। “আইন না থাকলেও পুলিশ অনেক কিছু করে। এ ধরনের অধ্যাদেশ চলতে পারে না,” বলেন তিনি।
মো. মান্না আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে এবং মব ভায়োলেন্স বেড়ে গেছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদাকে বাড়ি থেকে বের করে যেভাবে জনতা হামলা করেছে, তা কোনো সভ্য সংস্কৃতির প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, “যদি কেউ অন্যায় করে, তবে তাঁকে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে।”
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদের বাড়িতে হামলার ঘটনাও উল্লেখ করে মান্না বলেন, বাড়ি ভাঙচুরের এই সংস্কৃতি চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে। একইসঙ্গে তিনি থানায় হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাগুলোকেও সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেন।