জুলাই ৩, ২০২৫, ০৩:৩২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
আনুপাতিক ভোট (পিআর) আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী।
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই সকালে রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজন কী? এই ব্যবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে কোনো নেতা তৈরি হবে না, নেতৃত্বের বিকাশও হবে না। আমরা চিরায়ত গণতন্ত্রের পক্ষে, যেখানে বৈধ ভোটাররা ভোট দিয়ে নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘এক চক্ষু বিশিষ্ট দানবকে বিদায় করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা লড়াই করে এ দেশ ১৬ বছরের ভয়াবহ দিন পার করছে। সেই ১৬ বছর তরুণরা বাসায় ঘুমাতে পারেনি। হত্যা-গুম করেছে বিএনপিসহ অনেক মানুষকে। আমাদেরকে ১৬ বছর পাড়ি দিতে হয়েছে। শেখ হাসিনার হাত থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। রক্ত দিয়েছে আবু সাঈদ।’
রিজভী আরও বলেন, ‘একজন মানুষ দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে নেতা হয়েছেন, অথচ আনুপাতিক ভোটে তাকে নয়, দলকে ভোট দিতে হবে। এরপর দল থেকে বাছাই করে এমপি ঘোষণা করা হবে-এটি আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে। যেখানে প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে, সেই ১৮ কোটি মানুষের দেশে কেন এমন ভোট পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে? যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, বছরের পর বছর কারাবরণ করেছে, সেই গণতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে দেশের কোনো তরুণ শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। কখন কাকে ধরে নিয়ে যাবে, আর কার রক্তাক্ত লাশ তিস্তা, গঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে- এটাই ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই ভয়াবহ সময় পার করতে হয়েছে আমাদের। শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে হচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে মুক্তভাবে মতপ্রকাশ ও সমালোচনার সুযোগ থাকবে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা সবাই এক হতে পারি। গত ১৬ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর অকল্পনীয় দমন-পীড়ন চালিয়েও দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা যায়নি। গুম, খুন ও নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপি ঐক্য ধরে রেখেছে। গণতন্ত্রের আন্দোলনে বিএনপি সবসময় আপসহীন।’
রিজভী আরও বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপি অটুট থাকছে। ১৬ বছর ঘুম খুন হয়েছে বিএনপির লাখ লাখ মামলা জেল খেটেছে। সারা বাংলাদেশে কোটি কোটি সমর্থক বিএনপির। এই ৫ তারিখ পর্যন্ত তাদের যে হত্যা নীলা এটা মানুষ দেখেছে। তারা ব্যাংক লুট করেছে। এই মহিলা বাংলাদেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজির সঙ্গে বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জড়ানো চলবে না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের আচরণে যেন সাধারণ মানুষ কষ্ট না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন বিএনপির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পায়, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ যদি এসব অপকর্মে জড়িত থাকে, দল সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে- এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. জাহিদ হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. আউয়াল, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন, ড্যাব নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও ‘বিজয়ের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন রংপুর (ড্যাব)। এ সময় জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলেন রিজভী।