জুন ২১, ২০২৫, ০৯:২০ পিএম
পাকিস্তান থেকে শুরু হয় এই ট্রেন্ড।
কাঁচের গ্লাস, তার নীচেই মোবাইলে ফ্লাশ লাইট জ্বালানো উপড় থেকে দেয়া হচ্ছে হলুদের গুড়ো। ধীরে ধীরে হলুদের গুড়ো পড়ছে পানিতে। আলোর প্রতিফলনে পানিতে পড়া হলুদ হালকা গ্লো করছে। স্লো মোশন করা ভিডিওতো ফেসবুক,টিকটক, ইউটিউব সয়লাব। সেই সাথে রয়েছে ‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমার ‘ম্যায় আগার কাহু’ গানের মিউজিক।
কিভাবে এলো এই ট্রেন্ড
হঠাৎ করে কিভাবে এলো এই পানিতে হলুদ দেয়ার গ্লোয়িং ওয়াটার ট্রেন্ড। ফেসবুকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে যে সব ট্রেন্ড দেখা যায় সেগুলোর অধিকাংশই গত ১৯ শে জুন থেকে করা। তবে গুগলে কাস্টম সার্চ করে ডেট কমিয়ে আনলে পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছু পুরাতন ভিডিও। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন ভিডিও যেটি পানিতে হলুদ দেয়া হয় সেটি হলো টিকটকে।
গত ৩ রা ই জুন পাকিস্তানের একটি টিকটক একাউন্ট ‘সাঈদ আযূন 007’ থেকে কাঁচের গ্লাসে হলুদ দেয়ার ভিডিও ছাড়া হয়। যেটি দিনের বেলায় করা। মূল ক্যাপশন ছিল ট্রান্সফর্ম ইউর রিচুয়াল উইথ হলথি ওয়াটার ম্যাজিক। অর্থাৎ হলুদ পানির জাদুতে আপনার রীতি পরিবর্তন করুন। কিন্তু সেটিতে খুব বেশি ভিউ হয়নি বরং তিনি সেটি ডিলেট করে নতুন করে ওয়েট ফর ম্যাজিক লিখে আবার আপলোড করেছেন। এর আগে তিনি হাসপাতালের নিজের অসুস্থতার ভিডিও দিয়েছিলেন। দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য হলুদ পানি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে এই উপমহাদেশে।
প্রথম ভিডিওটি কোন ভিউ না থাকলেও পরবর্তী ভিডিওটি প্রায় ৪.৩ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। কিন্তু ৪ জুন থেকেই পাকিস্তানের টিকটকে এটা ট্রেন্ডিং ছিল। what a magic বা wait for magic ক্যাপশন দিয়ে এটা ট্রেন্ডে চলে যায়। এছাড়া ভারতে ইন্সটাগ্রামে বেশ জনপ্রিয় হতে থাকে এই ভিডিও।
কি কারনে হলুদ পানি বা গ্লোয়িং ওয়াটার ট্রেন্ড
হঠাৎ কোন কারন ছাড়াই ট্রেন্ডে রয়েছে এই ধরনের ভিডিও। গত কয়েকদিন ধরে ভারত জুড়ে এই ট্রেন্ড বেশি দেখা যায়। সপ্তাহ খানেক আগে ভারতের কেরালাতে এই ট্রেন্ডে সয়লাব ছিল। এরপরই পশ্চিম বঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এই ট্রেন্ড। মূলত শিশু কিশোরদের নির্মল বিনোদনের জন্যই এই ট্রেন্ডগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে পড়ছিল। সেই সাথে বাদ যায় নি বাংলাদেশেও। ছোট বড় থেকে শুরু করে সবাই এখন এই ট্রেন্ডে গা ভাসাতে ব্যস্ত।
কোন খরচ কিংবা আহামরি কোন কষ্ট ছাড়াই যখন এই ট্রেন্ড ফলো করা যাচ্ছে তাহলে দোষ কোথায়। শুধু প্রয়োজন একটি কাচের গ্লাস, মোবাইল ও হলুদ গুড়ো। অনেকে আবার টিউটরিয়ালও দিচ্ছে কি করলে এই ট্রেন্ড পারফেক্ট হবে। তাদের সাজেশন অনুসারে একসাথে বেশি হলুদ না দিয়ে অল্প করে ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অনেকেই চামচের বদলে কাগজের পেপারে হলুদ ছড়ানোর কথা বলছে।
হলুদ পানি জ্বল জ্বল করে কেন
সাধারণত হলুদের গুঁড়া বা ভিটামিন বি ক্যাপসুলের মধ্যে রাইবোফ্লেভিন নামক পদার্থ থাকে। এটি প্রাকৃতিকভাবে ফ্লুরোসেন্ট এবং অতিবেগুনি আলোর সংস্পর্শে এলে উজ্জ্বল ও সোনালি আভা নির্গত করে। এর অনন্য আণবিক কাঠামোর কারণে আলো শোষণ এবং সেটিকে বিচ্ছুরণ করার ক্ষমতা আছে।
কিভাবে করবেন এই ট্রেন্ডিং ভিডিও
প্রথমে একটি ফোনে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে তা উল্টে রাখতে হবে। এবার সরাসরি আলোর উপর পানি ভর্তি কাঁচের গ্লাস রাখতে হবে। তারপর ঘরের আলো নিভিয়ে কাঁচের গ্লাসের মধ্যে ফেলে দিতে হবে এক চিমটে হলুদ গুঁড়া। হলুদ গুঁড়া গ্লাসের চারপাশে ছড়িয়ে দিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। অনেকেই কাগজ থেকে হলুদের গুঁড়ো ছড়ায়।
এই হলুদ গুঁড়া ধীরে ধীরে মিশতে শুরু করবে পানির সঙ্গে। আর তখনই সেই পানি ভর্তি গ্লাসের ভিডিও করতে হবে। আর এভাবে ভিডিয়ো বানিয়ে তা সোশাল মিডিয়ায় সঠিক হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করা যেতেই পারে। হালকা স্লো মোশন করে ভিডিওটি ট্রেন্ডে চলে আসে খুব সহজেই।
প্রতিদিন হলুদ গুড়ার পানি খাওয়ার উপকারীতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে।
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি: হলুদ পানি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা কমাতে পারে।
প্রদাহ কমায়: হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা জয়েন্ট পেইন এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগ কমাতে সহায়ক।
ত্বকের জন্য উপকারী: হলুদ পানি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং বার্ধক্যের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সহায়ক: হলুদ পানি বিপাকক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
ডিটক্সিফিকেশন: হলুদ পানি শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, হলুদ পানি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।