জুলাই ১৬, ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়, সুকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীদের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। সেটা থামিয়ে বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে জাদুঘর বানাতে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে বাংলার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।
ময়মনসিংহের হরিকিশোর রায় রোডের শতাব্দী প্রাচীন ওই বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। হরিকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়ার জমিদার। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ।
ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায় সড়কে প্রাচীন একতলা ভবনটি ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ব্যবহার করে আসছিল। গত ১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ ভবনটিতে কোনো কার্যক্রম চালানো যায়নি এবং এটি পরিত্যক্ত ছিল। ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির কার্যক্রম চালাতে একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণের জন্য গত কয়েকদিন ধরে চলছে প্রাচীন বাড়িটি ভাঙার কাজ।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের ময়মনসিংহে চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা ও বিখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই বাড়ির বর্তমান মালিক বাংলাদেশ সরকার এবং বাড়িটির অবস্থা জরাজীর্ণ। বাড়িটি বাংলার সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর প্রতীক। এই গুরুত্বের কথা বিচার করে ভারত এই বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং তা সারাই ও পুনর্নির্মাণ করে সাহিত্যের মিউজিয়াম হিসাবে গড়ে তোলার আবেদন জানাচ্ছে। তাহলে তা হবে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সংস্কৃতির একটা প্রতীক। ভারত সরকার এই বিষয়ে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।”
কেন এই বাড়ি ভাঙা হচ্ছে?
ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান বলেছেন, ‘ভাড়া বাসায় একাডেমির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সব প্রক্রিয়া মেনে স্থাপনাটি ভাঙা হচ্ছে। এখানে আপাতত একটি আধাপাকা স্থাপনা হবে।’ ৩৬ শতাংশ জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা স্থাপনাটি ঠিক রেখে চার-পাঁচ ঘরের আধাপাকা স্থাপনা করার সুযোগ কি ছিল না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তা বলেন, ‘বাড়িটি থাকলে শিশুদের চলাচলে ঝুঁকি থাকত।’ বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তার জানা ছিল না বলেও স্বীকার করেন তিনি। খবর দ্য ডেইলি স্টার।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের (ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগ) মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এটি রায় পরিবারের ঐতিহাসিক বাড়ি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বাড়িটি এখনো তালিকাভুক্ত না হলেও এসব স্থাপনা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারে।’ শতবর্ষী স্থাপনা হিসেবে বাড়িটি রক্ষার জন্য তিনি জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ শিশু একাডেমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানান। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।