আজ ‘মা দিবস’: ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের এক নিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ১১, ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

আজ ‘মা দিবস’: ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের এক নিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

“মা”পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। এই এক ‘অক্ষরের’ ডাকে যেন লুকিয়ে আছে সীমাহীন স্নেহ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর নিরন্তর আত্মত্যাগের এক বিশাল মহাকাব্য। জন্মের প্রথম মুহূর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয়, নির্ভরতার নামমা। তাই মায়ের প্রতি সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানানোর জন্য প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’। যদিও মায়ের ভালোবাসা কোনো নির্দিষ্ট দিনের নয়, তবুও বছরটির একটি দিন উৎসর্গ করা হয় সব মায়েদের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে।

যেভাবে এল মা দিবস

বছরের একটি দিনকে শুধু মায়ের জন্য তুলে রাখার কথা প্রথম ভাবেন মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড। তবে আধুনিক মা দিবসের প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত ‘অ্যান জার্ভিস’। তিনি ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করতেন। ১৯০৫ সালে নিজের মাকে হারানোর পর তিনি মায়ের স্মরণে এই বিশেষ দিনের প্রচলন শুরু করেন। 

১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি প্রথমবারের মতো পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের একটি চার্চে মা দিবস পালন করেন। এই চার্চটি তার মা নিয়মিত বাইবেল পাঠদানে ব্যবহার করতেন। ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিসের মা মারা গেলে তার মাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে আনা জারভিস প্রথম মা দিবস পালন করেন।

তবে ইতিহাসে দেখা যায়, এরও আগে প্রাচীন গ্রিসে বসন্তকালে ‘রিয়া’ নামের দেবীকে ঘিরে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো। প্রাচীন গ্রিসে মা দিবসের আয়োজন হতো ঘরে ঘরে। এছাড়া ব্রিটেনে ‘মাদারিং সানডে’ নামে একটি দিন ছিল, যা সপ্তদশ শতকে মে মাসের চতুর্থ রবিবারে উদযাপিত হতো। মায়ের সঙ্গে সময় দেওয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর স্বীকৃতি ও প্রসার ঘটে ১৯১৪ সালে। মা দিবস উদ্‌যাপনের সূত্রপাত ঘটায় মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। ১৯১৪ সালের ৮ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই মা দিবস ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ১৯২০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় সব দেশে মা দিবসের প্রচলন শুরু হয়।

মা দিবসের তাৎপর্য

মা দিবস শুধুমাত্র একটি দিন উদযাপন নয়, এটি একটি অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। এ দিবসের মূল তিনটি উদ্দেশ্য হল

১. সব মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন,

২. মাতৃত্বকে মূল্যায়ন করা,

৩. সমাজে মায়েদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া।

মা শুধু একটি সম্পর্ক নয়, এটি এক অবিনশ্বর বন্ধনযেখানে ভালোবাসা হয় নিঃশর্ত, স্নেহ হয় অকৃত্রিম এবং আত্মত্যাগ হয় অপরিসীম। মা দিবস পালিত হয় একদিন, কিন্তু মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রতিটি মুহূর্তের। তাই শুধু একটি দিনে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষণেই হোক মাকে ভালোবাসার প্রকাশ। মা দিবস হোক মাকে শ্রদ্ধা জানানোর নতুন উপলক্ষ, নতুন প্রতিজ্ঞামায়ের হাসিই হোক সন্তানের সবচেয়ে বড় সাফল্য।  

ভালো থাকুক- পৃথিবীর সব মায়েরা।

Link copied!