চাকরিচ্যুতদের অবরোধে পটিয়ার ২৬ ব্যাংকে ৪ ঘণ্টা লেনদেন বন্ধ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম

চাকরিচ্যুতদের অবরোধে পটিয়ার ২৬ ব্যাংকে ৪ ঘণ্টা লেনদেন বন্ধ

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পটিয়ায় ছয়টি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে রোববার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় পটিয়ার সরকারি-বেসরকারি ২৬টি ব্যাংকের শাখার মূল ফটকে ব্যানার টানিয়ে অবরোধকারীরা তালা ঝুলিয়ে দেন। এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্যাংকে ঢুকতে না পারায় লেনদেন ও ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধকারীরা সকাল ৭টা থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করার পর সকাল ৮টায় ব্যাংকে তালা ঝুলিয়ে দেন। দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নিলে ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।

এর আগে সকাল ৭টায় শতাধিক চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারী পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়। পরে সকাল সাড়ে ৮টায় তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা সড়কে বেশ কয়েকবার প্রদক্ষিণ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। বেলা ১২টার দিকে চাকরিচ্যুতরা পটিয়া থানার মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতি সৈয়দ এয়ার মুহাম্মদ পেয়ারু, দক্ষিণ জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এমদাদুল হাসান, জেলা সিপিবি নেতা অলক দাশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা।

পরে দুপুর ১টার দিকে পৌর সদরের থানার মোড়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আসাদুজ্জামান, পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ও পটিয়া থানার ওসি নুরুজ্জামান। আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিলেন, বাহাদুর খাদেমী, বোরহান উদ্দিন, মফিজুল ইসলাম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান রিপন। বৈঠকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের দাবির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানানোর আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন। 

আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের চাকরিতে পুর্নবহাল করা না হলে ভবিষ্যতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর অধিকাংশই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। বেশ কিছু দিন ধরে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা আজ পটিয়ায় সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, ‘বিনা নোটিশে, বিনা কারণে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের পটিয়া শাখার ব্যবস্থাপক নাজিম বলেন, দুপুর ১টা থেকে লেনদেন স্বাভাবিক হয়। শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় আজ গ্রাহকের চাপ বেশি। অনেক গ্রাহক সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পটিয়া শাখার ব্যবস্থাপক রবিউল হাসান বলেন, ‘সকাল থেকে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হলেও দুপুর ১টার পর থেকে ব্যাংক কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।’

পূবালী ব্যাংকের পটিয়া শাখা ব্যবস্থাপক বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, ‘শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ অবরোধের কারণে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। আমাদের পৌনে ২টার দিকে লেনদেন চালু হয়। এরপর থেকে ব্যাংক কার্যক্রমও স্বাভাবিক হয়েছে।’

আন্দোলনকারীদের একজন তারেকুর রহমান। তিনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ক্যাশ অফিসার ছিলেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি অন্যদের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’

ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নড়াইল কালিয়া ব্রাঞ্চের আবছার উদ্দিন। তার বাড়ি উপজেলার খরনা ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামে। তিনি বলেন, ‘আমাকে বিনা নোটিশে টার্মিনেট করা হয়। আমাদের চাকরি যতক্ষণ পর্যন্ত পুর্নবহাল করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

হঠাৎ ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটিয়া সদরের সোনালী ব্যাংকের শাখার সামনে কথা হয় কোলাগাও এলাকার বাসিন্দা জমির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি সমকালকে বলেন, জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য ব্যাংকে এসেছি। তবে বন্ধ থাকায় সেবা নিতে পারছি না। কি করবো বুঝতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, পটিয়ায় বিভিন্ন ব্যাংকের ২৬টি শাখা রয়েছে। এসব ব্যাংক হলো, সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, পূবালী ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, এন আরবি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক মহিলা শাখা, কৃষি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক উপশাখা।

Link copied!