আগস্ট ১১, ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ফ্ল্যাপে সমস্যার কারণে ইতালির রোমে আটকা পড়েছে বিমানের একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
এ নিয়ে গত ২৮ দিনে অষ্টমবারের মত গোলযোগে পড়ল রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনটির বহরে থাকা বোয়িং উড়োজাহাজগুলো।
ইতালির স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় বোয়িং ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি রোম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসার কথা থাকলেও এখন সেটি রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে ‘গ্রাউন্ডেড’ অবস্থায় রয়েছে।
উড়োজাহাজের ফ্ল্যাপে ত্রুটি শনাক্ত করেছেন প্রকৌশলীরা। ফ্ল্যাপ হচ্ছে একটি উড়োজাহাজের ডানায় স্থাপিত সেই যন্ত্রাংশ যা দিয়ে উড্ডায়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উড়োজাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ফ্ল্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিমান কর্মকর্তারা বলছেন, লন্ডন থেকে যন্ত্রাংশ পাঠানোর পর উড়োজাহাজটি মেরামত করে ঢাকায় ফেরত আনা হবে। নিয়ম অনুযায়ী উড়োজাহাজের ২৬২ যাত্রীকে হোটেলে পাঠিয়েছে এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবিএম রওশন কবীর বলেন, “কিছু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রোম থেকে ঢাকার ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে। যাত্রীদের হোটেলে পাঠানো হয়েছে।”
রোমে গ্রাউন্ডেড উড়োজাহাজটির মেরামত প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে বিমানের মুখপাত্র বলেন, “ফ্ল্যাপ মেরামতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ লন্ডন থেকে পাঠানো হচ্ছে। যন্ত্রাংশগুলো আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা নাগাদ রোমে পৌঁছাবে। এরপর ত্রুটি সারিয়ে একই ফ্লাইটে যাত্রীদের রোম থেকে দেশে ফেরানো হবে।”
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে যাত্রীদের জন্য বিকল্প কোনো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। উড়োজাহাজটি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীরা বিমানের খরচে হোটেলেই থাকবেন। ইতালির এয়ারপোর্টে বাড়তি সময় অবস্থানের জন্যও বিমানকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
এর আগে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টে নামার পর বিমানের একটি বোয়িংয়ে সমস্যা দেখা দেয়। সেটি সারিয়ে দুই ঘণ্টা বিলম্বে উড়োজাহাজটি যাত্রীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে।
তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিমানের আবুধাবিগামী একটি বোয়িং উড়োজাহাজ ওড়ার ১ ঘণ্টা পর আবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে আসে। উড়োজাহাজটির তিনটি টয়লেটেরই ফ্লাশ একযোগে কাজ না করায় ভেতরে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, পরে পাইলট সেটিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনেন।
তার একদিন আগে বুধবার ঢাকা থেকে ওড়ার একঘণ্টা পর মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসে ব্যাংককগামী বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ। ওড়ার কিছুক্ষণ পর ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কম্পন হচ্ছে বুঝতে পেরে ঢাকায় ফিরে আসেন পাইলট।
এর আগে গত ৩০ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ বিমানবন্দরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে ছিল বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ। নির্ধারিত সময়ের ৬ ঘণ্টা পরে বিমানটি ঢাকায় ফেরানো হয়।
তার দুদিন আগে ২৮ জুলাই ওড়ার পর কেবিন প্রেশারে ত্রুটির সংকেত পেয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসে বিমানের দাম্মামগামী একটি বোয়িং ৭৭৭- ইআর উড়োজাহাজ। পরে যাত্রীদের অন্য উড়োজাহাজে দাম্মাম পাঠানো হয়।
তার চারদিন আগে গত ২৪ জুলাই দুবাই থেকে চট্টগ্রামে এসে যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিমানের আরেকটি বোয়িং ড্রিমলাইনার। উড্ডয়নের কিছু সময় পর পাইলট ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করলে সেটি আবার চট্টগ্রামে ফিরে যায়। ত্রুটি মেরামত শেষে দুই ঘণ্টা পর সেটি আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
তার আট দিন আগে গত ১৬ জুলাই রাতে ‘চাকায় ত্রুটি’ দেখা দেওয়ায় বিমানের দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা রুটের একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজকে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘গ্রাউন্ডেড’ করা হয়। বিমানের আরেকটি ফ্লাইটে চাকা ও যন্ত্রাংশ পাঠানো পর উড়োজাহাজটি মেরামত করা হয়। ৩০ ঘণ্টা বিলম্বে দেশে ফেরে উড়োজাহাজটি।
সরকারের পক্ষ থেকে যখন বিমানের জন্য একযোগে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার কথা হচ্ছে, তখন একের পর এক ত্রুটির মুখে পড়ছে বিমানের বহরে থাকা বোয়িংগুলো।
বিমানের বহরের এখন ২১টি এয়ারক্রাফটের মধ্যে ১৬টি বোয়িং। এর মধ্যে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর আর ছয়টি ন্যারোবডির বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ রয়েছে। এর বাইরে বিমানের বহরে স্বল্পদূরত্বে রুটে চলাচল উপযোগী পাঁচটি ড্যাশ- ৮০০ উড়োজাহাজ রয়েছে।