৩০০ টাকায় বানানো হয় ৫ হাজার টাকার মদ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম

৩০০ টাকায় বানানো হয় ৫ হাজার টাকার মদ!

মাত্র দু সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে বিষাক্ত মদপানে ২৩ জন মারা গেছে। ইতোমধ্যে ভেজাল মদ তৈরির কারখানার সন্ধানসহ বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদ ও মদ তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। ডিবির দাবি, এই ভেজাল মদের উপাদান ইথানলের (ইথাইল অ্যালকোহল) পরিবর্তে বিষাক্ত মিথানল (মিথাইল অ্যালকোহল) মেশায়। যা খেলে মানুষ ৬ ঘন্টার মধ্যে মারা যেতে পারে!

ইথানলের তুলনায় মিথানলের দাম কম। এ কারণে ভেজাল মদ উৎপাদনকারীরা বেশি লাভের আশায় মিথানল ব্যবহার করছে। মিথানল, চিনি, গ্লিসারিন ও বিভিন্ন ফ্লেভার দিয়ে কোনো ধরণের পরিমাপ ছাড়াই বানিয়ে ফেলছে ভেজাল মদ। বুধবার পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যথাযথ ডকুমেন্ট প্রদর্শনের পর ইথানলের দাম রাখা হচ্ছে ৮০০ টাকা। যার বিপরীতে মিথানলের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এই কম দামের সুবাদে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধ পন্থায় মিথানল সংগ্রহ করে। কিন্তু স্পিরিট জাতীয় এই কেমিক্যালটি শরীরের জন্য সর্বোচ্চ ক্ষতিকারক।

আর সব মিলিয়ে ৩০০ টাকার মধ্যেই তারা মদ সরবারহ করছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য গড়ে ৫ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে 'অ্যনালস অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে আসে যে প্রায় ৪ থেকে ১২ গ্রামের মত বিশুদ্ধ মিথানল সরাসরি সেবন করলে একজন মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।

সম্প্রতি দেশে যাদের মৃত্যু হয়েছে এবং যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন, তাদের অধিকাংশের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে 'মিথানল বিষক্রিয়া'র উল্লেখ রয়েছে। মিথানল বা মিথাইল অ্যালকোহল হচ্ছে স্পিরিটের সবচেয়ে অশোধিত পর্যায়।

সোমবার তেজগাঁও ও ভাটারার বিভিন্ন কারখানা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। বিষাক্ত মদের কারখানার ‘চিফ কেমিস্ট’হিসেবে পরিচয় দিতেন জাহাঙ্গীর আলম। যে একসময় ভাঙ্গাড়ির দোকানের কর্মচারী ছিল। বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিটফোর্ডে বিক্রি করত। সেখান থেকে কেমিকেল ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। সেখান থেকে কেমিকেল ও পূর্বের থাকা বোতল ব্যবসার অভিজ্ঞতা নিয়ে নিরক্ষর এ দোকানদার এখন ‘বিদেশী মদ’ তৈরির কারখানার ‘প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, মিথানল শরীরে প্রবেশ করলে ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে— এ দুই কারণেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর এটি চোখের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি করে।

২০১৭ সালে 'অ্যনালস অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে আসে যে প্রায় ৪ থেকে ১২ গ্রামের মত বিশুদ্ধ মিথানল সরাসরি সেবন করলে একজন মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।

চোলাই মদপানে ৫ জনের মৃত্যু || মহানগর সময় || Somoynews.tvঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, মিথাইল কিডনি ও লিভার দ্রুত বা ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে নষ্ট করে দিতে পারে। যারা রাতে মদপানের কারণে সকালে মারা গেছেন, তারা ভেজাল মদে এই মিথাইল সেবনের শিকার হয়েছেন, এমনটিই ধারণা তাদের।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, অনেকে মদের সাথে ঘুমের ওষুধ সেবন করে থাকেন। যেটি মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ভেজাল মদ তৈরির অপরাধে ডিবির হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত ভদকা সদৃশ্য মদ (সাদা-স্বচ্ছ রংয়ের) তৈরি করত। ভদকা তৈরি করতে হলে আলাদা রং মেশানো লাগে না। ফলে ভেজাল উৎপাদনকারীরা এটি বেশি বানায়। রাম, হুইস্কিজাতীয় মদের রং থাকে বিধায় এগুলো নকল কম করছে তারা। রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ এবং ইংলিশ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের নাম দিয়ে মূলত স্পিরিট, রং আর পচা পানির এই বিষাক্ত মদের কারখানা চলছে।

Link copied!