স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে, কী আছে সুপারিশে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৫, ২০২৫, ১২:২১ পিএম

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে, কী আছে সুপারিশে

ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।

সোমবার, ০৫ মে সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এই কমিশনের সদস্যরা সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়।

এর মধ্য দিয়ে দুই ধাপে গঠিত ১১ সংস্কার কমিশনের সবগুলো প্রতিবেদন সরকারপ্রধানের দপ্তরে জমা পড়ল।

প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে বিনামূল্যে ও স্বতন্ত্র হেলথ ক্যাডার সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা বৃদ্ধি, রোগীদের বিদেশমুখীতা কমাতে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব করেছে কমিশন।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশসমূহ:

স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন

বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটির জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতি

স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনাএই তিনটি বিভাগে লাইন প্রমোশনের জন্য পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ‍‍`সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস‍‍`-এ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ

চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে

জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ

নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ও সরেজমিনে তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন

সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার পরিবর্তে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ এবং দালালদের দৌরাত্ম্য অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ

চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বার্থে ভারসাম্য রেখে ‍‍`স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন‍‍` প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরিগুলোর মান গ্রহণের জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি

সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, আইএইচটি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সদর জেনারেল হাসপাতালসমূহে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা

গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব প্রদান এবং সরকার সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনে সদস্য ছিলেন মোট ১১ জন।

তারা হলেন বাংলদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন; পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লিয়াকত আলী; গাইনোকলজিস্ট ডা. সায়েবা আক্তার; শিশু স্নায়ুবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. নায়লা জামান খান; সাবেক সচিব এম এম রেজা; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল) ডা. মোজাহেরুল হক; আইসিডিডিআর, বির গবেষক ডা. আজহারুল ইসলাম; স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টারের ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন; গ্রিন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের ডা. সৈয়দ আতিকুল হক; আইসিডিডিআর, বির শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের উমায়ের আফিফ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয় সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের লক্ষ্যে।

প্রথম ধাপের কমিশনগুলোর প্রতিবেদন ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশ সংস্কার ছাড়া বাকি সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

দ্বিতীয় ধাপে গত ১৮ নভেম্বর আরো পাঁচটি কমিশন গঠিত হয়। এ ধাপের স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা পড়ল।

Link copied!