এপ্রিল ২৫, ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম
সদ্য সাবেক হওয়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বারের মতো কোনো রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রীয় বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হলো। এমতাবস্থায় অন্য রাষ্ট্রপতিরা কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদায় সংবর্ধনা পেলেন না-এই প্রশ্ন সবার মনে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতি দেখেছেন। এরমধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রপতি হিসেবে টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর ৪১ দিন দায়িত্বে ছিলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর তাঁকেই দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন দু’জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ দায়িত্ব পালন করেছেন স্বল্প সময়ের জন্য। আবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেউ ছিলেন অস্থায়ী। অনেকে আবার একাধিকবার রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন। কেউ কেউ আবার মেয়াদ শেষের আগেই পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
স্বাধীনতার লাভের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তবে মাত্র ২দিন পর সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর স্পিকার মোহাম্মদউল্লাহ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও পরে ১৯৭৪ সালের ২৭ জানুয়ারি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর আবারও রাষ্ট্রপতি পদে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খোন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হন। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলে তার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম।
১৯৭৭ সালে তাকে সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেই রাষ্ট্রপতি হন। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ১৯৭৮ সালের জুনে। তিন বছর পর চট্টগ্রামে সেনাসদস্যের হাতে নিহত হলে প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও পরে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেনি তিনি।
১৯৮২ সালে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। টানা ৯ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দীনের অস্থায়ী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন এরশাদ। একারণে তার ভাগ্যেও রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা জোটেনি।
১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম হয়। বিএনপি ক্ষমতায় ছিল ওইসময়। রাষ্ট্রপতি হন বিএনপির আবদুর রহমান বিশ্বাস। তিনি স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করলেও বিদায় সংবর্ধনা পাননি। কারণ তাঁর বিদায়ের সময়, ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি হন। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলেও ২০০১ সালে স্বাভাবিকভাবে বিদায় নিলেও জোটেনি রাষ্ট্রীয় বিদায় সংবর্ধনা।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিএনপি নেতা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। তবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না যাওয়া এবং তাকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করায় মাত্র সাত মাস সাত পরই বিএনপির চাপে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হন। তার ভাগ্যেও জোটেনি রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা।
২০০২ সালে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সরকারের মেয়াদ শেষ হয়। এসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে বিএনপির সংকট তৈরি হলে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। এতে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দল আন্দোলন শুরু করলে একপর্যায়ে দেশে আসে সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার।তাই মেয়াদ শেষ করলেও ইয়াজউদ্দিন পাননি রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। তবে মেয়াদ শেষ করার আগেই তার মৃত্যু হওয়ায় অস্থায়ী ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ ২৪ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আর পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় বিদায় সংবর্ধনা।