জানুয়ারি ২২, ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম
গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে বড় মগবাজারের ৩০৮ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলা থেকে সাংবাদিক শবনম শারমিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই দিনই সাংবাদিক শবনম শারমিনের ছোট ভাই ওমর রশিদ বাদী হয়ে শবনমের স্বামী সাইদুল ইসলামকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার এক মাস হতে চললেও এখনো ওই মামলার কোন অগ্রগতি নেই। এদিকে সন্দেহভাজন স্বামী ও মামলার আসামী সাইদুল ইসলাম আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। রবিবার (২২ জানুয়ারি) এ তথ্য জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল।
নিহত শবনম শারমিনের পরিবারের দাবি, তারা পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না। নিহতের ছোট ভাই ওমর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, শবনম যদি আত্মহত্যা করে থাকে তাহলেও এর পেছনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্যাতনের ঘটনা থাকতে পারে। আমাদের ধারণা তাঁকে মানসিক-শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। লাশের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে। আগে বিভিন্ন সময় আলাপকালে ওর ওপর টর্চার করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছিল। তাঁদের ভাড়া করা বাসায় তাঁর স্বামী সাইদুল ছাড়া আর কেউ থাকতো না।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ফয়সাল বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি। বাদি পক্ষের কোন অভিযোগ থাকলে উর্ধত্বন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে পারেন।
ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা আবেদন করেছি এখনো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাইনি।
এদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে অফিশিয়ালি কথা বলতে রাজি না হলেও তাঁরা জানিয়েছেন, এ ধরনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতে কম করে ২-৩ মাস সময় লেগে যায়।
প্রসঙ্গত, ২৭ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলের ভাড়া বাসা থেকে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের এসাইনমেন্ট এডিটর শবনম শারমিনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তাঁর মরদেহটি সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
একটি টিভি চ্যানেলের সাবেক সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সাইদুল ইসলামকে শবনম বিয়ে করেছিলেন। শবনম অফিস থেকে ছুটিতে ছিলেন। সেই ছুটির মধ্যেই তাঁর বাসা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল কুদ্দুস তখন জানান, খবর পেয়ে বড় মগবাজার ৩০৮ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার একটি বাসার দরজা ভেঙে ভেতর থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি পচে গেছে। পুলিশ ধারণা করছে, ৪-৫ দিন আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ফরেনসিক টিম বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। সিআইডি জানাচ্ছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে এবং বিস্তারিত তদন্তের পর তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।
ঘটনার পরপরই দায়ের করা থানায় লিখিত অভিযোগে সাংবাদিক শবনম শারমিনের বোন শবনম পারভিন বলেন, শবনম শারমিন মুক্তি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি/মার্চ মাসের দিকে সাইদুল ইসলামকে বিয়ে করে বলে জানতে পারি। তারপর থেকে তাঁরা দুইজন হাতিঝিল থানার বড় মগবাজার এলাকায় একটি বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করে। গত ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আমি আমার ছোট বোনের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। তখন সে জানায়—সে অফিসের কাজে বাইরে আছে। আরও জানায়, ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় নাও ফিরতে পারে।
তিনি অভিযোগে আরও বলেন, আমি গত ২৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় আবার ফোন দিলে ফোনে রিং হলেও রিসিভ করছিল না। পরে ওইদিন সাইদুল ইসলামকে (বোনের স্বামী) ফোন করলে পরে এ বিষয়ে জানাবেন বলে জানান। পরে আর ফোন না দেওয়া আমি আবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে তাকে ফোন দেই। তখন তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ২৫ ডিসেম্বর আবার ফোন দিলে তিনি জানান, আপনার বোন আপনাকে ঠিকানা দেয় না, আমি কেন দিবো। আপনাদের বোনকে আপনারা খোঁজে নেন। এসময় সে শারমিন সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলে।
তিনি অভিযোগে বলেন, কোনও খোঁজ না পেয়ে আমার ছোট ভাই ওমর রশিদকে পারভিনের অফিসে পাঠাই। অফিসে গিয়ে সে জানতে পারে সে দুই সপ্তাহ ধরে অসুস্থ, অফিস করছে না। আমি আবার সাইদুলকে ফোন দেই। চাপাচাপি করলে সে বাসার ঠিকানা দেয়।
পরে ঘটনাস্থলে আমার ছোট বোনের বান্ধবী সাদিয়া আমাকে জানায়, সাইদুল আমার বোনকে তালাকের জন্য শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করতো। সবকিছু বিবেচনা করে ধারণা করছি—সাইদুল নির্যাতন করে আমার বোনকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে।
এ বিষয়ে জানতে নিহত শবনম শারমিনের স্বামী এশিয়ান টিভির সাবেক অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক সাইদুল ইসলামের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শবনম শারমিনের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলায়। তাঁর বাবা মো. হারুন অর-রশিদ, মা মাসুদা খানম। শবনম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে প্রথমে সিনিয়র ফটোগ্রাফার হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি দ্য রিপোর্ট-এ এসাইনমেন্ট এডিটরের দায়িত্ব পান।