জুন ২৭, ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার অধিকৃত ইউক্রেনের অঞ্চল থেকে গম কেনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে বাংলাদেশি কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার পরিকল্পনা করছে কিয়েভ। ইউক্রেনের দাবি, ঢাকাকে একাধিকবার সতর্ক করার পরও এই বাণিজ্য থামেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অঞ্চলগুলো দখলে রেখেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের দাবি, ২০২২ সালের আগ্রাসনের আগেই রাশিয়া এসব অঞ্চল থেকে গম চুরি করে আসছে। তবে রুশ কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, ওই অঞ্চলগুলো এখন রাশিয়ার অংশ এবং সেগুলো চিরকাল রাশিয়ারই থাকবে।
রয়টার্সের হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, দিল্লির ইউক্রেন দূতাবাস ২০২৪ সালে একাধিকবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে দেড় লাখ টনের বেশি চুরি করা গম গ্রহণ না করার আহ্বান জানায়। এসব গম রাশিয়ার কাভকাজ বন্দর থেকে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এই গোপন কূটনৈতিক বার্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারতের ইউক্রেন দূতাবাসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্ডার পোলিশচুক বলেন, বাংলাদেশ কোনো উত্তর দেয়নি। এখন আমরা বিষয়টি ইইউতে তুলব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, রাশিয়া চুরি করা ইউক্রেনীয় গম তাদের নিজস্ব গমের সঙ্গে মিশিয়ে তারপর রপ্তানি করছে—এটা একটি অপরাধ।
বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, যদি গমের উৎস রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনীয় অঞ্চল হয়, তাহলে তা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশ চুরি করা গম আমদানি করছে না বলেও তিনি দাবি করেন।
ইউক্রেনের পাঠানো চারটি চিঠিতে রুশ দখলকৃত সেভাস্তোপোল, কের্চ ও বারদিয়ানস্ক বন্দর থেকে কাভকাজ হয়ে বাংলাদেশে আসা গমবাহী জাহাজের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়। নভেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ সময়কালের মধ্যে এসব জাহাজের আসা-যাওয়ার সম্ভাব্য সময়ও উল্লেখ করা হয়।
গত ১১ জুন পাঠানো চিঠিতে ইউক্রেন সতর্ক করে বলেছে, চুরি করা গম আমদানি করলে বাংলাদেশ কঠিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। এতে আরও বলা হয়, শুধু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইইউর মুখপাত্র আনিত্তা হিপার জানান, চিহ্নিত জাহাজগুলো আপাতত কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। তবে প্রমাণ মিললে ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
২০২৪ সালে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলো (ক্রিমিয়া বাদে) থেকে দেশটির মোট গম উৎপাদনের প্রায় ৩ শতাংশ এসেছে। রাশিয়ার বৃহৎ গম পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান রুসঅ্যাগ্রোট্রান্স জানিয়েছে, মে মাসে বাংলাদেশ ছিল রুশ গমের চতুর্থ বৃহত্তম ক্রেতা।
পোলিশচুক জানান, এই গম সোনা বা হীরার মতো নয় যে সহজে শনাক্ত করা যাবে। রাশিয়া গমের উৎস গোপন করতে মিশ্রণ করছে, যাতে চুরি ধরা না পড়ে।
রয়টার্সকে এক রুশ গম ব্যবসায়ী বলেন, ‘একবার রপ্তানির জন্য গম লোড হয়ে গেলে তার উৎস শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব।’