এপ্রিল ১৫, ২০২২, ১১:১৭ পিএম
মাদ্রাসা শিক্ষক কাউসার মিয়া (৩৪) ফেসবুকে প্রেম করেছিলেন সামিয়া জাহান নামের একজন নারীর সাথে। সামিয়া আসলে পুরুষ। তাঁর নাম শামসুল ইসলাম (২৮)। নারী সেজে তিনি প্রেম করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে এক সাথে ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে সেই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে আসেন শামসুল। জিম্মি করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেন শামসুল। ব্যর্থ হয়ে ওই শিক্ষককে হত্যা করেন তিনি।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকায় হাত-পা বেঁধে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে ওই শিক্ষককে। লাশ উদ্ধারের পর শুক্রবার বিকেলে গোয়াইনঘাট থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় সিলেট জেলা পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের শিকার মাদ্রাসাশিক্ষক কাউসার মিয়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কালাম বহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত যুবক শামসুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক মিয়াপাড়ার বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, সামিয়া জাহান পরিচয়ধারী যুবক শামসুল ইসলামের আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার কাউসার মিয়া জাফলং বেড়াতে আসেন। শামসুলের কথামতো কাউসার জাফলংয়ে মেঘালয় নামের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, সামিয়া জাহান আসলে একজন পুরুষ। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করলে কাউসারের বেশ কিছু সম্পাদনা করা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন শামসুল। সেই সাথে নিজেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁকে ভয় দেখান। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করলে কাউসার দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে তাঁর ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পরে কাউসারের হাত-পা বেঁধে জাফলং জিরো পয়েন্টের টিলাসংলগ্ন এলাকায় নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শামসুলকে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, শামসুল ইসলামের কাছ থেকে একটি নকল পিস্তল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্টিকারযুক্ত চারটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন অপরাধ ও প্রতারণামূলক কাজে জড়িত। যার কারণে পরিবার থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন। ৬ থেকে ৭ মাস ধরে সামিয়া জাহান পরিচয় দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে নারী সেজে মাদ্রাসাশিক্ষক কাউসার মিয়ার সাথে প্রেমের ফাঁদ পেতেছিলেন। মূলত ভুয়া ফেসবুক আইডির নারী সামিয়া জাহানের আমন্ত্রণেই জাফলংয়ে গিয়েছিলেন কাউসার মিয়া। এটিই কাল হয়েছিল কাউসারের। ফলে জীবন দিতে হলো তাঁকে।
এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহরিয়ার বিন সালেহ, গোয়াইনঘাট সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম ও পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর ফারুক মোড়ল।