বেশ কয়েকটি ই কমার্সের অভিনব প্রতারণার পর এখন অ্যাপসভিত্তিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নানান চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্রহ করে নিয়মনীতির বাহিরে চড়া সুদ, গ্রাহকদের ব্যক্তিগত নেয়ার পাশাপাশি আমানতেও উৎসাহী করছে অ্যাপগুলো। ফলে আবারও বিপুল সংখ্যক গ্রাহক প্রতারণা শিকার হতে যাচ্ছে।
অভিনব প্রচারণায় গ্রাহক আকৃষ্ট করছে
পুড়তে হবে না কাঠখড়, ক্ষয় হবে না জুতার তলাও। লাগবে না কোন জামানত। চাইলেই কয়েক মিনিটেই পাওয়া যাবে ঋণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন প্রলোভন দেখিয়ে পাতা হচ্ছে ঋণের ফাঁদ। জামানতবিহীন ঋণের হাতছানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অনেকেই। অনুসন্ধানে দেখা যায় বর্তমানে ফেসবুকে ও অ্যাপস স্টোরে র্যাপিড ক্যাশ, ক্যাশম্যান, ক্যাশক্যাশ, টাকাওয়ালা, এমক্যাশ বাংলাদেশ'সহ বেশকিছু অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যারা ঋণ প্রদান করার কথা বলে ২০০ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছে। অথচ ব্যাকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে ঋণ গ্রহণ করা যায়।
হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য
সাধারণত অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৩-৬ মাস মেয়াদে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে থাকে। অ্যাপটি ডাউনলোড করে একাউন্ট খুলতে জুয়েল রানার (ছদ্মনাম) কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নম্বর এমনকি পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয়।
এরই প্রেক্ষিতে জুয়েল রানা (ছদ্মনাম) যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে তিন হাজার টাকার ঋণের আবেদন করেন। আবেদনটি গ্রহণ করা হলেও পান ২১৯০ টাকা। সার্ভিস চার্জের নামে প্রতিষ্ঠানটি কেটে নেয় ৮১০ টাকা। এখানেই শেষ নয়। ঋণ পরিশোধে ৩ থেকে ৬ মাসের সময় দেয়ার কথা হলেও সময় দেয়া হয় ৭ হাজার টাকা। ৭ দিন পর আবার ৩০১৮ টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানায়। অর্থাৎ তিন হাজার টাকায় বাড়তি গুণতে হবে ১৬৩৮ টাকা।
হাওয়ায় চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো
কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চলছে অ্যাপসগুলো। কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবিষয়ে কোন তথ্য দেয়া নেই অ্যাপসে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অ্যাপসগুলোর ফেসবুক পেইজে গিয়ে দেখা যায় অফিসের কোনো ঠিকানা নেই। দেওয়া হয়নি যোগাযোগের নম্বরও। তবে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া নম্বর নিয়ে র্যাপিড ক্যাশ ও ক্যাশম্যানের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তারা কল রিসিভ করেনি। এছাড়া র্যাপিড ক্যাশের (০১৭৮৯৭৩৫৩০২) যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, কোনো অভিযোগ থাকলে অ্যাপসে প্রবেশ করে মেসেজের মাধ্যমে অভিযোগ দিতে হবে। এই কথা বলেই কল কেটে দিয়ে ব্লক করে দেয়া হয়। পরে অনেক চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া র্যাপিড ক্যাশের ওয়েবসাইটে দেয়া টিএনটি নম্বরে ফোন করলেও রিসিভ করেনি।
লেনদেনের হিসেব জানে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অনলাইনে ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন আছে কিনা সেসব বিষয়ে জানতে অফিসের ঠিকানা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চাইলে, তা দিতে অস্বীকৃতি জানান গ্রাহক প্রতিনিধিরা। এসব অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কত টাকা লেনদেন হচ্ছে তার কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানেই না এসব অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের কথা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক কোনো ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে নেয়। কিন্তু কোনো চক্র যদি অনলাইনে এমন অ্যাপস খুলে ঋণ দিতে চায় সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু করার থাকে না।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোন অ্যাপসেঋণ দেয়ার সামর্থ্য রাখে না। এ বিষয়ে বারবার গ্রাহককে বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হয়েছে এসব ফাঁদে যেন না পড়ে। কিন্তু এরপরও এক শ্রেণি এটার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সাধারণ নিরীহ মানুষ এদের ফাঁদে পা দিচ্ছে।
নতুন নতুন অ্যাপস বাড়ছে
কোন ধরনের তদারকি কিংবা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে ঋণ প্রদান ও আমানত সংগ্রহকারী অ্যাপসের সংখ্যা। এ রকম একাধিক আছে যারা সুদ কারবারিসহ আরও অনেক প্রতারণামূলক কাজ করছে। বেস্টওয়ে, ইজিলাইফ, টুউইশ, আনঞ্জাম, বাইওটেক, সুপার লাইফসহ অনেক আছে যাদের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতারণা করা। সুদের কারবার যারা করছে এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।