আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা তালেবানের হাতে চলে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স তাদের রুট পুনঃনির্ধারণ করেছে। আফগানিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলতেই তাদের এ সিদ্ধান্ত।
মার্কিন বিমান পরিবহণ সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, ভার্জিন আটলান্টিক ও ব্রিটেনের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করবে না। ইউনাইটেড এয়ালাইন্সের মুখপাত্র জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিমান চলাচল বেশ খানিকটা ব্যহত হবে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরেডার২৪ জানিয়েছে, সোমবার (১৬ আগস্ট) আফগানিস্তানের স্থানীয় সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বেশ কিছু এয়ারলাইন্স আফগান আকাশসীমা ব্যবহার করলেও বেশিরভাগই পাকিস্তান ও ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করেছে।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এবং দেশের সরকার সম্প্রতি সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল হামলার প্রেক্ষিতে সংঘাতপূর্ণ এলাকার আকাশসীমা এড়িয়ে যাওয়ার দিকে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে গুলি করে ভূপাতিত করা হলে ২৯৮ জন মারা যান । এরপর, ২০২০ সালে, ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমানকে ভূপাতিত করে ইরানের সেনাবাহিনী। ওই ঘটনায় ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউএস এয়ারলাইন্স এবং অন্যান্য দেশী বিমান সংস্থাগুলোকে আফগান আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ২৬ হাজার ফুটের কম উচ্চতায় চলাচলকারী ফ্লাইটগুলোকে আফগান ‘ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিয়ন’ বাদে অন্যান্য আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে এই ‘ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিয়ন’ সেবাটি কেবল কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় পাওয়া যায়। এর বাইরে অন্যান্য এলাকার আকাশসীমায় চরমপন্থী মিলিশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে সামরিক অপারেশন এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ আরো কয়েকটি দেশ তাদের নিজ নিজ বিমানসংস্থাগুলোকে ঝুঁকি এড়িয়ে চলার জন্য আফগান আকাশসীমায় অন্তত ২৫ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে চলাচল করার পরামর্শ দিয়েছে।
সাউথ কোরিয়ান এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তাদের কিছু কার্গো বিমান আফগান আকাশসীমা ব্যবহার করলেও যাত্রীবাহী বিমানগুলো আফগানিস্তান এড়িয়ে চলছে। তাদের মুখপাত্র জানান, ‘আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আফগান আকাশসীমায় আমাদের কার্গো ফ্লাইটগুলো ঝুঁকি এড়িয়ে বেশি উচ্চতা দিয়ে চলাচলা করছে। তিনি আরো বলেন, আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। প্রয়োজন হলে আমরা ফ্লাইট রুটগুলো পরিবর্তন করবো’।
তাইওয়ানের মালিকানাধীন চায়না এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যারোস্পেস নির্দেশনা অনুসরণ করে তাদের রুটগুলো পরিবর্তন করে নেবে।
এদিকে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে দেশটি অভিমুখী ফ্লাইটগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে এমিরেটস এয়ারওয়েজ তাদের কাবুলের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা জানার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখার জন্য অনুরোধ করেছে তারা।