জটিল পরিস্থিতিতে বাজেট, আছে ৩ ঝুঁকি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

মে ৫, ২০২৪, ০৯:০৯ এএম

জটিল পরিস্থিতিতে বাজেট, আছে ৩ ঝুঁকি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ছবি: সংগৃহীত

এবারের বাজেটে তিনটি ঝুঁকি আছে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে এবার মানুষ তিনটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

রোববার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) উদ্যোগে ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক নীতি সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে।

এই সংলাপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতায় চলমান জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, “প্রথমত কর্মসংস্থান, দ্বিতীয়ত মানসম্মত শিক্ষা ও সর্বশেষ সামাজিক সুরক্ষা। ৪ নম্বরে এসেছে পিছিয়ে পড়া মানুষের বৈষম্য কমিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থা। বাজেট পিছিয়ে পড়াদের জন্য হতে হবে সংবেদনশীল, তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ুর বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমার কথা বাজেট যাই হোক, তার বাস্তবায়ন যেন যথাযথ হয়। যার কাছে দুই টাকা যাওয়ার কথা, সেটা যেন তার কাছে যায়।”

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “খুবই জটিল রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল। বাজেটকে সামনে রেখে আমরা সামাজিক ও সরেজমিন মতামত নিয়েছি। অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। যার মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। অর্থনীতিতে এখনও অতি মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে। এটা গ্রাম কিংবা শহর এবং খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের জন্য সত্য। সেহেতু প্রথম সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, যা মানুষের জীবনমানকে আঘাত করছে।”

সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি জীবনমানে সরাসরি আঘাত হানছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ঋণ এখন ৪২ শতাংশ। যার প্রভাবে বিনিময় হারে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ঋণে কখনও খেলাপি হয়নি। কিন্তু সেই বিশ্বাসে এখন চিড় ধরছে।”

এরপর দ্বিতীয় কারণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “দ্বিতীয়ত ঋণের পরিস্থিতি। সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, তার চেয়ে দেশীয় উৎস থেকে দ্বিগুণ টাকা ঋণ নেয়। এটার দায়-দেনা পরিস্থিতি ভিন্ন একটা ইঙ্গিত বহন করছে। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেই ধারায় শ্লোথকরণ হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে কর আহরণ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।”

দেবপ্রিয় বলেন, “দেশে মূল্যস্ফীতি এখনও ১০ দশমিক ১০-এর কাছাকাছি, যা ক্রয়ক্ষমতা কমাচ্ছে। পিছিয়ে পড়াদের ভোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু সেই সুফল বাংলাদেশে দেয়া যাচ্ছে না।”

জিডিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জিডিপির ৩৭ শতাংশ সরকারি ঋণের পরিমাণ ও ব্যক্তিখাতে ঋণ ৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণ রয়েছে। এর ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতদিন বলতাম বাংলাদেশ কখন বিদেশি ঋণ অনাদায়ী করেনি, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সরকার ঋণের টাকা দিতে পারছে না। যার পরিমাণ অন্তত ৫ শতাংশ। আর জিডিপি হার ৪ শতাংশ, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ওপরে। সেটা অর্জন করতে বাকি সময়ে জিডিপি হার হতে হবে ১০ শতাংশে ওপরে। যার বাস্তবায়ন অসম্ভব। কারণ বিনিয়োগ যোগ্য সম্পদ কমে এসেছে, অন্যদিকে ব্যক্তিখাত কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না।”

এতে বিরোধী দলীয় উপনেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, নাগরিক প্লাটফর্মের কোর সদস্য ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডি সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!