আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা স্মারকলিপি দিতে পারেননি। অভিভাবকেরা স্কুলের অধ্যক্ষকে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে স্মারকলিপি গ্রহণ করতে আহ্বান জানালে তিনি আসেননি। পরে অভিভাবকদের স্মারকলিপি না দিয়েই ফিরতে হয়েছে।
অভিভাবকেরা জানান, ১২ আগস্ট তারা ৯টি দাবিতে মানববন্ধন করেন। দাবিগুলো বাস্তবায়নে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবিগুলো মেনে নেয়নি। উল্টো অভিভাবকদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাতে শুরু করেন। এগুলোর জবাব চেয়েই তারা স্মারকলিপি দিতে চেয়েছিলেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সময় দেওয়া ছিল দুপুর ১২টা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সোয়া ১২টার দিকে অভিভাবকেরা স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরাও পৌঁছাতে থাকেন। সাড়ে ১২টার দিকে অভিভাবকেরা স্মারকলিপি দিতে সাংবাদিকদেরসহ ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করেন। তখন ফটকের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। অভিভাবকেরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাংবাদিকসহ ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে একপর্যায়ে সাংবাদিকদের নিয়েই তারা স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে যান।
ভেতরে যাওয়ার পর অভিভাবকদের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় সভাকক্ষে নিয়ে বসানো হয়। সেখানে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুদ আলম। তখন অভিভাবকেরা জানান, তারা চান কনফারেন্স কক্ষে এসে মিডিয়ার সামনে অধ্যক্ষ স্মারকলিপি গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া অধ্যক্ষের কাছে তাদের কিছু সরাসরি জিজ্ঞাসা রয়েছে। মাসুদ আলম তখন চলে যান। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মাসুদ আলম মাইলস্টোনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুলকে সঙ্গে করে কনফারেন্স কক্ষে ফিরে আসেন।
তখন অভিভাবকদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে চার-পাঁচজন মিলে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসতে। কিন্তু অভিভাবকেরা প্রথমে এতে রাজি হননি। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে চান। এ প্রস্তাবে আবার স্কুল কর্তৃপক্ষ সায় দেয়নি। শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষের ওই দুজন প্রতিনিধি অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চলে যান। অভিভাবকেরাও কনফারেন্স কক্ষ থেকে বেরিয়ে একাডেমিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান।
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দুই সন্তানকে (তাহিয়া আশরাফ নাজিয়া ও আরিয়ান আশরাফ নাফি) হারিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, তার মেয়েকে কোচিংয়ে দিতে স্কুল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তারা দেননি। ঘটনার দিন (২১ জুলাই) যেকোনো অজুহাতে তার মেয়েকে কোচিংয়ে আটকে রাখা হয়। সেদিন মেয়েকে আটকে না রাখলে হয়তো তাদের ছেলেও ওই ভবনে গিয়ে তার বোনকে আনতে যেত না। সবাই আসার পরও যখন দেখে বোন আসছে না, তখন দৌড়ে সে বোনকে আনতে গিয়েছিল। যার ফলে ভাই–বোন দুজনই মারা গেছে। আমার মেয়ে তো কোচিংই করে না।
নিহত শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারের মামা লিয়ন মীর সাংবাদিকদের বলেন, মানববন্ধন থেকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। দুজন শিক্ষিকাকে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছিল। একজন খাদিজা মিস, আরেকজন শিক্ষক মানববন্ধন করার দিন এক অভিভাবকের গায়ে হাত তুলেছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে জানাল যে অভিভাবকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়েছে। অথচ তারা কোনো দাবিই মেনে নেয়নি। উল্টো অনেক মিথ্যাচার করেছে এবং অভিভাবকদের নামেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
লিয়ন মীর আরও বলেন, ‘আমরা নাকি মায়াকান্না করছি। এত দিন ধরে কীভাবে কান্না ধরে রাখি। আমরা নাকি টাকার লোভে কান্না করছি। এসব স্ট্যাটাস দিচ্ছে। স্ট্যাটাসে দুজন ভাইস প্রিন্সিপাল কমেন্ট করেছে, দে আর গ্রিডি (লোভী)—এসব। এগুলোর জবাব চাইতেই আমরা এসেছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোচিং নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ একটা মিথ্যাচার করছে। তারা বলছে, অভিভাবকেরা কোচিং করাতে আবেদন করে। আসল সত্য হচ্ছে, শিক্ষকেরা একটি লিখিত ফরম্যাট পাঠায় শিক্ষার্থীদের হাতে। বলে স্বাক্ষর নিয়ে আসতে। এটাকেই তারা এখন বলছে অভিভাবকেরা সন্তানদের কোচিং করাতে আবেদন করে।’
স্মারকলিপি জমা না দিতে পেরে পরবর্তী কী পদক্ষেপ হবে, জানতে চাইলে লিয়ন মীর বলেন, নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।