আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরসহ বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। এর বিনিময়ে তিনি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু এলাকা থেকে রুশ বাহিনী প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সময় পুতিন এই শর্তগুলো তুলে ধরেন, যা সম্পর্কে দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
গত শুক্রবার আলাস্কার একটি সামরিক ঘাঁটিতে ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের পর এই তথ্য প্রকাশ পায়। এটি ছিল ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দুই দেশের প্রেসিডেন্টের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগামী সোমবার ওয়াশিংটন সফরে যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি আলাস্কা বৈঠকে যুদ্ধবিরতির আশা করেছিলেন, কিন্তু তা পূরণ হয়নি। তবে তিনি বলেন, ভূখণ্ড ভাগাভাগি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বড় মাত্রায় ঐক্যমত হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত, তবে ইউক্রেনের সম্মতি প্রয়োজন, যারা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
দুটি সূত্র জানায়, পুতিনের প্রস্তাব মূলত ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের নেতাদের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, তবে এটি পূর্ণাঙ্গ নয়। শনিবার ট্রাম্প এই প্রস্তাব নিয়ে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুতিনের শর্তগুলো প্রাথমিক আলোচনার জন্য, নাকি চূড়ান্ত দাবি, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই শর্ত মানা ইউক্রেনের জন্য কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুতিন বলেছেন, পূর্ণ সমঝোতা ছাড়া যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়, যা জেলেনস্কির দাবিকে জটিল করে তুলছে।
প্রস্তাবের বিবরণ
সূত্র অনুযায়ী, রাশিয়ার প্রস্তাবে কিয়েভকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দেবে। তবে ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছাড়তে নারাজ, কারণ সেখানে তাদের শক্তিশালী অবস্থান রাশিয়ার অগ্রগতি রোধে সহায়ক।
ডিপ স্টেট প্রকল্পের তথ্যমতে, রাশিয়া সুমি ও খারকিভের প্রায় ৪৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে, কিন্তু দনবাসের ৬,৬০০ বর্গকিলোমিটার এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। রাশিয়া এই অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে।
সূত্র জানায়, পুতিন ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি চান, যা ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করেছিল। তবে এই স্বীকৃতি কার কাছ থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশ না ইউক্রেন—তা স্পষ্ট নয়। কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা ক্রিমিয়ার রুশ শাসন মেনে নিতে রাজি নয়।
এছাড়া, পুতিন কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, তবে এটি ইউরোপীয় নাকি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, তা নিশ্চিত নয়। ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার তেল ক্রেতা দেশগুলোর (যেমন চীন) বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ এখনই জরুরি নয়, তবে ভবিষ্যতে বিবেচনা করা হতে পারে।
পুতিনের প্রস্তাবে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদান থেকে বিরত থাকার শর্তও রয়েছে, তবে তিনি ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়া, রাশিয়া চায় ইউক্রেনে রুশ ভাষাকে সরকারি মর্যাদা এবং রুশ অর্থোডক্স গির্জাকে অবাধ কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া হোক।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা অভিযোগ করেছে, এই গির্জা রাশিয়ার পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি ও প্রচারণায় জড়িত। যদিও গির্জা কর্তৃপক্ষ এটি অস্বীকার করে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছে। ইউক্রেন সম্প্রতি রাশিয়া-সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে, তবে তা এখনো কার্যকর হয়নি।