তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক (বিজিএমইএ) সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, সরকার তৈরি পোশাক খাতের জন্য নতুন যে বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে, পোশাকশিল্পের সব উদ্যোক্তা তা মেনে নেবে ।
যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন, পোশাকমালিকেরা নতুন মজুরি কাঠামো মেনে নিয়ে আগামী ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে স্বল্প সময়ের নোটিশে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিজিএমইএ।
সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি পোশাকশিল্প খাতে শ্রমিক হতাহত হওয়ার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন ফারুক হাসান। তিনি নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং যেসব মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানান।
কয়েক দিন ধরে বহিরাগত ব্যক্তিদের উসকানিতে কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন এবং কারখানা ভাঙচুর করছেন বলে অভিযোগ করেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, এতে অনেক উদ্যোক্তা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এটাকে তিনি অনভিপ্রেত হিসেবে আখ্যা দেন। তবে এর চেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, বহিরাগত ব্যক্তিদের উসকানির কারণে পোশাক কারখানার সাথে সাথে বেশ কিছু লেদার কারখানা, রাসায়নিক গোডাউন, ফেব্রিকসের গোডাউন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের উদ্দেশে ফারুক হাসান বলেন, ‘আপনাদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কিছু করবেন না, যাতে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়।
এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়।’
ফারুক হাসান দুঃখের সাথে বলেন, মালিকেরা যখন শিল্প ও অর্থনীতি সচল রাখতে ও পোশাককর্মীদের কর্মসংস্থানের খাত সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্য সহকারে কারখানা চালু রেখেছেন ও রাখছেন, তখন কোনাবাড়ি এলাকায় বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠান এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিসংযোগের ঘটনা মালিকদের হতোদ্যম করে।
সংবাদ সম্মেলনে পোশাক খাতের রপ্তানির চিত্র তুলে ধরেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, চলতি ২০২৩ (পঞ্জিকা বর্ষ) সালের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
এ সময় মূল্যের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ২৭ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২১ দশমিক ৭৭।
অন্যদিকে পরিমাণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আমদানি ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ পরিমাণের দিক থেকে এই আট মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
একই সময় ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। পাশাপাশি পরিমাণের দিক থেকে সারা বিশ্ব থেকে আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।