দেড় লাখ কোটি টাকার ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২১, ২০২১, ০২:০৩ এএম

দেড় লাখ কোটি টাকার ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ

বর্তমানে খেলাপী ঋণ রয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। সেই সাথে খেলাপী হওয়ার পথে রয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। যার ফলে দেড় লাখ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ হবার আশঙ্কায় রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত।

নতুন ঝুঁকিতে ৫০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টে (এসএমএ) ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১০৪ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে ছিল ৪৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে এসএমএ মানের ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালের মার্চে ছিল ৪৬ হাজার ৮৩২ কোটি টাকার এসএমএ ঋণ। বছরের ব্যবধানে এসএমএ ঋণ বেড়েছে ২৭২ কোটি টাকা।

এসএমএ ঋণ কেন ঝুঁকিপূর্ণ

ব্যাংক খাতের নিয়মানুযায়ী কোনো ঋণের ৮টি কিস্তি অনাদায়ি থাকলে সেই ঋণকে এসএমএ হিসাবে গণ্য করা হয়। আর যে ঋণের কিস্তি নির্ধারিত তারিখে পরিশোধ করা হয় না, সেই ঋণকে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বলা হয়। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণ ৯ মাস থাকার সুযোগ রয়েছে। এ সময়সীমা অতিক্রম করলেই খেলাপি হবে। নানা ধাপে উল্লিখিত দেড় লাখ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে যাওয়ার বিষয়টি ঋণখেলাপির আগের ধাপ।

মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বাড়ছে

এদিকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত শিল্প খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে ৯৮ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর তিন মাসের হিসাবে এই অঙ্ক আরও বেশি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিল্পে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ছিল ৭০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসে শিল্প খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ২৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

খেলাপী ঋণ প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এর প্রায় অর্ধেক শিল্প খাতের। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বেড়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শিল্প খাতে ৯০ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে।  শিল্পঋণে মার্চ পর্যন্ত বকেয়া ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চ শেষে মেয়াদি শিল্পঋণের বকেয়া স্থিতি ছিল ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। তবে চলতি বছরের মার্চ শেষে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খেলাপি বেড়েছে ২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।

পাচার হবার শঙ্কা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ তসলিম দ্য রিপোর্টকে বলেন, খেলাপি ঋণ পাচার হয়ে যায় বিধায় এটা আদায়ের সম্ভাবনা কম। এটি রোধ করতে প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ১০ খেলাপিকে গঠিত ট্রাইব্যুনালের আওতায় বিচার করতে হবে। তাদের সম্পদ ক্রোক করতে হবে। কোনো ধরনের আপিলের সুযোগ দেওয়া যাবে না।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এখন হয়তো বা বিনিয়োগ নেই। ওদিকে ব্যাংকে টাকাও আছে। তাই আসল সংকটটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু বিনিয়োগ পরিবেশ ফিরে এলে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে খেলাপি ঋণ। দেখা দেবে মহাসংকট।

Link copied!