জুলাই ২৮, ২০২২, ০৬:১৭ পিএম
পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর পর মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রপ্তানিপণ্য নিয়ে মোংলা বন্দর ছেড়েছে ‘এমভি মার্কস নেসনা’ নামে পানামার পতাকাধারী একটি বিদেশি জাহাজ।
ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তৈরি গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ওই জাহাজটি এদিন বেলা ১১টায় ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে মোংলা বন্দর ছেড়ে যায়। এই বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বন্দরের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে মনে করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং এজেন্টরা।
মোংলা বন্দর দিয়ে গোর্মেন্টস পণ্য রপ্তানির ঘটনাকে ঐতিহাসিক ও বন্দরের জন্য নতুন একটি মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা।
তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বৃহস্পতিবার ইতিহাস সৃষ্টি করলো মোংলা বন্দর। এটি আমাদের জন্য একটি বিরাট সফলতা। একই সঙ্গে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি শুরু করায় মোংলা বন্দরের সক্ষমতা অর্জন প্রমানিত হলো। এখন থেকে রপ্তানি গ্রুপ ও শিপিং এজন্টগুলো মোংলা বন্দর বেশি করে ব্যবহার করবে।”
মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো ওয়েটিং চার্জ নেওয়া হয় না উল্লেখ করে রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানির বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। কারণও ছিল। অবকাঠামো ঘাটতি, সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এবং ঢাকা থেকে মোংলা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায় নানান ঝুক্কি-ঝামেলার কারণে রপ্তানিকারকরা মোংলা বন্দর ব্যবহারের প্রতি উদাসীন ছিলেন। তারা রপ্তানির ক্ষেত্রে এই বন্দর ব্যবহারে সাহস পেতেন না। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে এতদিন যেটুকু বাণিজ্য ছিল তার প্রায় পুরোটাই আমদানি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা।ছবি: সংগৃহীত
রপ্তানি শুরু হওয়ায় প্রমাণিত হলো মোংলা বন্দর ব্যবহারের দিক দিয়ে নিজের সক্ষমতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও বলেন, “বৃহস্পতিবার ১৭টি কন্টেইনারে ঢাকা ও আশপাশের ২৭টি শিল্পকারখানার ৩৪ টিইউজ গার্মেন্টস পণ্য দিয়ে পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে জাহাজটি।”
মোংলা বন্দরের একটি সূত্র জানায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে ১ কোটি ১৮ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে,রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার ৪১২ মেট্রিক টন পণ্য।
এ বিষয়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আগে নানা কারণে বিশেষ করে ঢাকা থেকে মোংলায় মালামাল পাঠাতে সময় বেশি লাগতো এবং বেশ ঝামেলা পোহাতে হত। তাই বন্দর ব্যবহার কম হতো। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন রপ্তানি পণ্য মোংলায় পৌঁছাতে বেশি সময় লাগছে না। বরং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম (২৬০ কিমি) পৌঁছাতে যে সময় লাগে, মোংলায় (১৭০ কিমি) পৌঁছাতে তার চেয়ে কম সময় লাগছে।”
তিনি আরও বলেন,“বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস পণ্য শুরু হয়েছে এই বন্দর দিয়ে। এই ঘটনার পর বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) রপ্তানিকারকরা মোংলা বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করছি।” দেশি-বিদেশি শিপিং এজেন্টরাও মোংলা বন্দর দিয়ে তাদের রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে এগিয়ে আসবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।