আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, জরুরি ব্যবস্থা না নিলে চলতি আগস্ট মাসে মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব আরও তীব্র হতে পারে।
সোমবার, ১১ আগস্ট এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সরকারি তথ্যের বরাতে রয়টার্স বলছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১০১ জন মারা গেছে এবং ২৪ হাজার ১৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই সংকটের মুখে থাকা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও তীব্রভাবে বাড়ছে। আগস্ট মাসে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে জুলাই মাসে ৪১ জনের মৃত্যু হয়, যা জুনে ১৯ জনের মৃত্যুর দ্বিগুণের বেশি।
এ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার রয়টার্সকে বলেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটাপন্ন। এটি ইতিমধ্যেই সারা দেশে বিস্তৃত ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। এটি থামানোর পদক্ষেপ না নিলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়বেই। আগস্টে জুলাই মাসের তুলনায় কমপক্ষে তিনগুণ বেশি রোগী দেখা যেতে পারে। এবং সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।’
এ জন্য মশানিরোধক ব্যবহার, মশারির ভেতর ঘুমানো এবং মশার বংশবৃদ্ধির জন্য জমে থাকা পানি অপসারণের আহ্বান জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলছেন, ‘আমাদের উচিত সমন্বিতভাবে স্প্রে ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো, বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার জন্য আদর্শ প্রজনন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ডেঙ্গুতে ঢাকাকে ‘হটস্পট’ বিবেচনা করা হলেও এই রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। রাজধানীর বাইরেও অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। এতে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলো চাপে পড়ছে। কেননা সেখানে চিকিৎসা সুবিধা রাজধানীর মতো নয়।
চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলছেন, ‘প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তীব্র পেট ব্যথা, বমি, রক্তপাত অথবা অতিরিক্ত ক্লান্তি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যাওয়া উচিত, যাতে জটিলতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো যায়।’
ডেঙ্গুর তীব্র মৌসুম এখনো সামনে থাকায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, সরকারের নেতৃত্বে মশা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনসাধারণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এতে করে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই প্রাদুর্ভাব আরও কমানো সম্ভব।
রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে মারাত্মক বছর ছিল ২০২৩। ওই বছর ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যায় এবং ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়।