ছবি: বিএনপি মিডিয়া সেল
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়, ফজরের নামাজের পরপরই বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন। দলের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়।
এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মাতা তৈয়বা মজুমদার। শৈশবে তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দিয়ে তার রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
আশির দশকে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি সাত দলীয় জোট গঠন করেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তার ও গৃহবন্দী থাকতে হয়।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা খাতে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা এবং উপবৃত্তি কর্মসূচি চালু করা হয়। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও তিনি ১১৬ আসন নিয়ে সংসদের বৃহত্তম বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠন করে ২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন। ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ২৯তম অবস্থানে রাখে।
বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে কোনো নির্বাচনী আসনে পরাজিত না হওয়ার বিরল রেকর্ড রয়েছে তার। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যেসব আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সবগুলোতেই বিজয়ী হন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি স্টেট সিনেট গণতন্ত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ উপাধিতে ভূষিত করে।