ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক বুক ভালোবাসা ও অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছেন লাখো মানুষ।
আজ বুধবার বিকাল ৩টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা।

জানাজায় অংশ নেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার পরিবার ও স্বজনরা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বিএনপির শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং দেশের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শুরুর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার দেশের রাজনীতিতে আগমন ছিল আকস্মিক, তবে দলের সংকটপূর্ণ সময়ে তিনি দায়িত্ব নেন এবং স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। তিনি কখনো আধিপত্যবাদী শক্তির সঙ্গে আপোস করেননি এবং দেশের মানুষের কাছে অনন্য দৃঢ় চরিত্র হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।

কান্নাজড়ি কণ্ঠে তারেক রহমান বলেন, আমি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান হিসেবে বলছি, এখানে যারা উপস্থিত আছেন, আমার মা জীবীত থাকা অবস্থায় আপনাদের কারো কাছ থেকে যদি কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, দয়া করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি সেটি পরিশোধের ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, একইসঙ্গে উনার কোনো ব্যবহারে, কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে মরহুমার পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। দোয়া করবেন, আল্লাহ তাআলা যেন উনাকে বেহেশত দান করেন।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে তার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করার কথা রয়েছে।
জানাজা উপলক্ষে সকাল থেকেই সংসদ ভবন ও আশেপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রান্ত থেকে মানুষ ঢাকায় এসে জড়ো হন। অনেকেই কালো ব্যাজ ধারণ করে এবং প্রিয় নেত্রীর শোকবার্তা-সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১০ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য এবং ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
এর আগে সকাল ৯টার আগে তার মরদেহ বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো একটি গাড়িতে করে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে শেষবারের মতো খালেদা জিয়ার স্বজন ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে শ্রদ্ধা জানান।
খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রয়াণ দেশের রাজনীতিতে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি নয়, বরং একটি যুগের অবসান।
তার মৃত্যুতে সরকার বুধবার এক দিনের সাধারণ ছুটি এবং ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।