দেশে আইনত কোন এমএলএম প্রতিষ্ঠান না থাকলেও শুধু রাজধানীতেই শতাধিক বহুস্তর বিপণন বা এমএলএম প্রতিষ্ঠান সক্রিয়ভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদিকে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন কারাগারে বসেই জুমের মাধ্যমে নতুন এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করছে। যার ফলে দেশে এমএলএম ব্যবসার বিস্তার রোধ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ২০১৫ সালে বেআইনি ঘোষণা করলেও এখনও পুরোদমে চলছে কার্যক্রম।
কারাগারে বসে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনের এমএলএম ব্যবসা
প্রতারণার কারণে বেআইনী এমএলএম
দেশে বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির সব কোম্পানিই এখন বেআইনি। ২০১৫ সালে ৪ টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকলেও প্রতারণা করার অভিযোগে তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকার লাইসেন্স দিয়েছে, এমন একটিও এমএলএম কোম্পানি আর নেই। এমএলএম পদ্ধতিতে কেউ ব্যবসা করলে আইনত দণ্ডনীয় হবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় এবং লাইসেন্স না পাওয়া কোম্পানিগুলো সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীতে সক্রিয় যে সব এমএলএম প্রতিষ্ঠান
মালিবাগ,মগবাজার,গুলশান,ফার্মগেট,হাতিরপুল,মতিঝিল,পল্টনে বেশি সক্রিয় এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো।অনেক প্রতিষ্ঠানেরই একাধিক অফিস রয়েছে। প্রায় শতাধিক এমএলএম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০ টির মত প্রতিষ্ঠান সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ নামক এমএলএম কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আনোয়ার এইচ রয়েল রানা। ‘উইন লাইফ গ্লোবাল লিমিটেড’ পরিচালনা করছেন মো. মনিরুল ইসলাম কাইয়ুম। ‘ডেলি বাজার লিমিটেড’ নামের এমএলএম চালাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম হৃদয়। ‘পাওয়ার লাইফ বিডি লিমিটেড’-এর কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রেজাউল লতিফ রিপন। মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ইনফিনিটি’ পরিচালিত হচ্ছে গুলশান-১ এ জব্বার টাওয়ার থেকে। ‘এবি নিউট্রিক ইন্টারন্যাশনাল’ ঢাকার বায়তুল ভিউ টাওয়ার এবং চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। রাইন রাজ্জাক প্লাজায় ‘মডার্র্ন এমএক্সএন লিমিটেড’ চালাচ্ছেন আলমগীর মতি। পল্টনভিত্তিক অনেকগুলো এমএলএম সক্রিয় থাকলেও ‘মিশন-১০’ নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বড়। ‘ওয়াল মিশন’ পরিচালিত হচ্ছে বিজয়নগর স্কাইলার্ক সেন্টার থেকে। রাজধানীর মোতালেব প্লাজাসহ হাতিরপুলেই ৩০টির মতো এমএলএম কোম্পানির ব্যবসা কার্যালয় রয়েছে।
এছাড়া এমিটাচ, এমলবিং, টিয়ানশি, ফরএভার, এক্সিলেন্ট ফিউচার, ডিএক্সএন, এবিনিউট্রিক, এডভান্স বাংলা, ডি ক্লাসিক লাইভ, ডাহিসেন, ড্রিম টুগেদার, পিনাকল, এসএমএন গ্লোবাল, সানসু লাইফ, লাইফওয়ে বিডি, লাক্সার গ্লোবাল, এমওয়ে ভিনশন বেশি সক্রিয়।
অনুমোদনহীন ক্ষতিকর পণ্য বিক্রি করছে এমএলএম প্রতিষ্ঠান টিয়ানশি।
পরিচিতদের মাধ্যমে বিস্তার হচ্ছে
ম্যাজিক ম্যাগনেট ব্রেসলেট, হারবাল কফি, বিভিন্ন রোগের ওষুধ, রক্ত সঞ্চালন মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনার মাধ্যমেই এই এমএলএমের বিস্তার ঘটছে। মগবাজারের টিয়ানশিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ৫ হাজার টাকার পণ্য কেনার মাধ্যমে সদস্য হওয়া যায়। ৫ হাজার টাকায় ম্যাগনেট ব্রেসলেট, রক্ত সঞ্চালন মেশিন বা কফিজাতীয় পণ্য কেনা যায়। তবে পণ্য কেনার পরপরই শর্ত দিয়ে দেয়া হচ্ছে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে। যার ফলে ১ বছরের মধ্যেই কোটিপতি হবার পদ্ধতিও শিখিয়ে দেয়া হয়।
দেশে বিস্তার রোধ হচ্ছে না কেন
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পরিচালক (গবেষণা) খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বেআইনি হলেও এটার বিরুদ্ধে প্রচারণা নেই। এছাড়া পণ্যের বিনিময়ে সদস্য করার প্রলোভন থাকায় সহজেই এর ফাঁদে পা বাড়াচ্ছেন লোকজন। তাই আইনের পাশাপাশি প্রচারণা ও সচেতনা বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে বেশ কয়েকটি এমএলএম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এটি মূলত গ্রাহকদের রাতারাতি বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা করেন। তাই শুরুতেই গ্রাহক পর্যায়ে অভিযোগ করে না।
ছদ্মবেশে এমএলএম ব্যবসা
বেআইনি হবার ফলে বিভিন্ন ছদ্মনামে এমএলএম ব্যবসা পরিচালন করা হচ্ছে। ই কমার্স,মাশরুম ট্রেনিং,ফ্রিল্যাসিং ইত্যাদির আড়ালে এই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।