আসছে ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এ তথ্য জানান। করোনাকালে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু প্রস্তুত তা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ রয়ে গেছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেছেন, আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা কি ভাবছেন?
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণরুপে মানা সম্ভব নাও হতে পারে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারের ওপরেও এটা অনেকাংশে নির্ভর করবে। তবে সরকারপ্রদত্ত বিধিমালা মানার জন্য আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করবো।
রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাসিবুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেকদিন পর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভিড় জমবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিস্তৃত এলাকাজুড়ে হওয়ায় তেমন সমস্যা হবে না। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য স্কুলের সবার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাতো থাকবেই।
সাতক্ষীরা ও রাজধানীর এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, শিক্ষার্থীদের ফেরার অপেক্ষায় তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। অল্পকিছু কাজ যা বাকি আছে তা একদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় সবগুলো স্কুলই সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং ধোয়ামোছার কাজ চলছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ১২ তারিখ থেকে তারা সকল কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বলে সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কতটা প্রস্তুত?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় প্রায় ১৭ মাস পরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণীকক্ষে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন। সম্প্রতি একাধিক আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখার সময়ের তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রেস ব্রিফিংয়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতির বিষয়ে বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের জন্য উপযুক্ত অবস্থায় প্রস্তুত করার কাজ শেষ হয়েছে। যেসব জায়গায় এখনও কিছু কাজ চলছে সেগুলোও আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
চালু থাকবে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম
দেশে করোনার সংক্রমণ কমলেও, ভাইরাসটির বিস্তার সম্পূর্ণরুপে থেমে যায়নি। বিভিন্ন সময়ে সরকার এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
ডা. দিপু মনি এ সময় বলেন, সরকার কর্তৃক গৃহীত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু থাকবে। এছাড়াও দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করছেন। আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ও গণমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করবো।
এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। তবে কারও যেন অসুবিধা না হয়, বিশেষভাবে ছোট বাচ্চাদের। এ বিষয়ে শিক্ষকেরা নজর রাখবেন।
প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে পাঠদান কার্যক্রমের সময়
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একই শ্রেণীকক্ষে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা যাতে পুরোপুরিভাবে সম্ভব হয় তারজন্য বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার সময় এবার যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন এবং যারা আগামী বছরের পরীক্ষার্থী রয়েছেন, এবং প্রাথমিকের মধ্যে যারা শুধুমাত্র পিএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছেন তারা প্রতিদিন আসবেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা প্রথমে সপ্তাহে শুধু একদিন শ্রেণীকক্ষে এসে শিক্ষাগ্রহণ করবেন। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য প্রয়োজনবোধে একই ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে ক্লাস করানো হবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ওপর যাতে বেশি চাপ না পড়ে সেজন্য প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সময় কমিয়ে দেয়া হবে। পরিস্থিতির যদি ক্রমাগত উন্নতি ঘটতে থাকে তবে পরবর্তীতে অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরও শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের দিবস এবং সময় দুটোই পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম নমুনা শনাক্ত করা হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ভাইরাসটির সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তার নয় দিন পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে দফায় দফায় ছুটি বাড়ানোর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর যাবত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।