জুন ১১, ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন নারী শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আতিকের বিরুদ্ধে।
মেহেদী বাংলা একাডেমির সামনে এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করে দৌঁড় দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী। পরে পথচারীদের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
গতকাল সোমবার (১০ জুন) ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পরে হামলার শিকার ওই নারী শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আতিকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, শারীরিকভাবে হামলে পড়া ও সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের অবতারণা করে হয়রানির অভিযোগ তোলেন।
অভিযোগ করা হয়েছে, মেহেদীকে রক্ষা ও পালিয়ে যেতে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন আতিক। তার কাজে বাধা দিতে এগিয়ে যান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরেকজন নারী শিক্ষার্থী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এগিয়ে আসা নারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলে পড়েন তিনি।
এর ফলে অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থী চোখে-মুখে আঘাত পান। পরে সেই নারী শিক্ষার্থীকে ‘ছাত্রলীগ নেতা’ পরিচয় দিয়ে তিনি ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন বলে সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন।
অভিযুক্ত আতিক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহ-সম্পাদক ও ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনে অধ্যয়নরত তিনি। অন্যদিকে মেহেদি হাসান বাঁধন একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও ফিশারিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি শহীদুল্লাহ্ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীর অভিযোগ
এর আগে রোববার ঘটনার পরদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর বরাবর আরেকটি লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৮ জুন আনুমানিক রাত নয়টা ২০ মিনিটে আমি ও আমার বন্ধু বাংলা একাডেমির পাশের ফুটপাত দিয়ে টিএসসির দিকে আসছিলাম। এমন সময় ফুটপাতে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী শিক্ষার্থীকে পেছন অযাচিতভাবে ধাক্কা ও হাত দিয়ে অশ্লীলভাবে এক ব্যক্তিকে স্পর্শ করতে দেখি আমি। ওই ব্যক্তি (মেহেদী হাসান) আমার সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে পালিয়ে যায়।
তৎক্ষণাৎ আমি আতঙ্কিত হই ও তাকে ধরতে পিছু নিই। সেই সঙ্গে আশপাশের লোকজন যেন তাকে ধরিয়ে দেয় সে জন্য জোরে চিৎকার করতে থাকি। একপর্যায়ে তাকে লোকজন ধরে ফেলে ও সেখানে আমি উপস্থিত হই। কিন্তু পরক্ষণেই দেখি, অজ্ঞাত আরেকজন (আতিক) প্রথম অজ্ঞাত ব্যক্তিকে রক্ষার জন্য ও পালাতে সহযোগিতা করছিল। তার কাজে আমি বাধা দিই। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে শারীরিকভাবে আমার ওপর হামলে পড়েন। মুখে চড়-ঘুষি দেয়। এতে আমার চোখের চশমা ভেঙে যায় এবং চোখে-মুখে প্রচণ্ড আঘাত পাই। যার কারণে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় তাদের দুজনকে প্রক্টোরিয়াল টিমের কাছে সোপর্দ করে। সেই সঙ্গে এটিও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নিজেকে তিনি বারবার ছাত্রলীগ সহ-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে আমাকে পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে হেনস্তা করার ভয় ভীতি দেখান।
অভিযোগপত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মূল ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে তাকে বুলিং করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র সামাজিক মাধ্যমে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে অভিযুক্তদের রক্ষায় মূল ঘটনাকে বিকৃত করে, বিভিন্ন মিথ্যা পোস্ট ও বানোয়াট মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে ও আমার সেই বন্ধুকে ফেসবুকে বুলিং ও সামাজিকভাবে হেনস্তা করছে। যেখানে আমাদেরকে ওই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে একটি ছিনতাইকারী চক্র বলে উল্লেখ করে ‘বাজে মন্তব্য ও অশালীন শব্দ চয়নের মাধ্যমে হয়রানি ও মানহানি’ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওই নারী শিক্ষার্থী আমার সম্পূর্ণ অপিরিচিত। আমি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। এই অবস্থায় আমি মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত।
এর আগে ভুক্তভোগী চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী যাকে অশ্লীলভাবে স্পর্শ ও ধাক্কা দিয়ে মেহেদী হাসান নামে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে সেই নারী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, টিএসসি থেকে হলে রওনা দেওয়ার সময় বাংলা একাডেমির পথ-সংলগ্ন ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় মো. মেহেদি হাসান (২০১৯-২০ সেশন, শহীদুল্লাহ্ হল) আমাকে বাজে মন্তব্য করে ও আমার স্পর্শকারতর স্থান বাজেভাবে স্পর্শ করে ও দৌঁড়ে পালায়। এমন সময় আমি চিৎকার করি এবং আশেপাশের মানুষ তাকে ৩ নেতার মাজারের কাছে ধরতে সক্ষম হয়। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আমি আমার বন্ধুদেরকে ফোন দেই। তাদের সহযোগিতায় ও প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করি।
এই ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।
এই দুই ঘটনায় দুটি আলাদা অভিযোগ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান বলেন, “ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হচ্ছে। যে শাস্তি পাওয়ার সে শাস্তি পাবে।”