কোটা বিরোধী আন্দোলন

মধ্যরাতে হঠাৎ উত্তাল শিক্ষার্থীরা, ছাত্রলীগের শোডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৪:২৪ এএম

মধ্যরাতে হঠাৎ উত্তাল শিক্ষার্থীরা, ছাত্রলীগের শোডাউন

মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে উত্তাল শিক্ষার্থীরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।

রোববার (১৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী কোটা বাতিলের দাবিতে হল থেকে বেরিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। পরবর্তীতে রাত দেড়টার দিকে ধীরে ধীরে নিজ নিজ হলের দিকে ফিরে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’- শ্লোগান ওঠার পর থেকেই মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে শোডাউন করতে থাকে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতও তাতে যোগ দেন। দিবাগত রাত তিনটার দিকে মিছিল সহকারে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ছাত্রলীগ। তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নেই।” এ সময় রাজাকারবিরোধী শ্লোগান দিতে থাকেন শোডাউনকারীরা। পক্ষান্তরে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরতে থাকেন।

নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয় তাদের জাতীয় পতাকা বহনের কোনও অধিকার নেই।”

একই সময় রাজকারদের পার্সেল করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের অন্যতম নেতা আল মামুন বলেন, ‍“যারা বলেছে, আমরা রাজাকার, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- এই রাজাকারদের আস্তানা বাংলাদেশে হবে না। রাজকারদের পার্সেল করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবে মুক্তিযুদ্ধ-পক্ষ। কারণ যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এদেশ পেয়েছি, তাদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার সেখানে অনেক শহিদ শুয়ে রয়েছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের পাশে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদেরকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছে। আমরা এই রাজাকারদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে চাই না। এই রাজাকারদের চিহ্নিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আমরা কোনও রাজাকারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে দেবো না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল সহকারে শিক্ষার্থীরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

গতকাল রোববার মধ্যরাতে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নর্থ সাউথ রোডে যোগ দিয়ে ঢাকা-৬ আসনের এমপি সাঈদ খোকনও সংহতি ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ শ্লোগানে সরব হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।

যা বলছেন শিক্ষার্থীরা

রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে জমায়েত হতে থাকেন। পরে রাত দেড়টার দিকে সবাই যার যার হলে ফিরে যান। রোকেয়া হলের একজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গতকাল রোববার রাতে হলের তালা ভেঙে আমরা আন্দোলনস্থলে জড়ো হয়েছি। পরে রাত দেড়টার দিকে আমরা সবাই যার যার হলে চলে যাই। আমাদের প্রতিবাদ জানানোর ছিল। আমরা সেটা করেছি। অবস্থান নেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত ছিল না।”

এর আগে শিক্ষার্থীদের এ প্রতিবাদ মিছিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “এই বিক্ষোভ কর্মসূচি আমরা ডাকিনি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে হলের গেট ভেঙে এসে এই বিক্ষোভ করছেন।”

একই দিন বিকেলে বঙ্গভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে?”

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

Link copied!