যেসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২৯, ২০২২, ০৯:৪১ পিএম

যেসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

গত বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ শিক্ষার্থী এবং ৩৬ জন নারী শিক্ষার্থী। আত্মহননের পেছনে ‘সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা’ ও ‘আর্থিক সমস্যাসহ’ বেশ কয়েকটি কারণ ওঠে এসেছে। এরমধ্যে ‘পারিবারিক সমস্যা’ এবং ‘হতাশাও’ রয়েছে।

আঁচল ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রকাশিত সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।  শনিবার বেলা ১১টায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

আঁচলের সমীক্ষায় দেখা যায়, গত বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২ শিক্ষার্থী, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী শিক্ষার্থী। এই হিসেবে দেখা যায়, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশই ছাত্র। ছাত্রীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ছাত্র গত বছর আত্মহত্যা করেছেন।

সমীক্ষায় বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১৮-২১ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৭ জন, ২৬-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১০ জন এবং ২৯ উর্ধ্ব ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কত জন

গত বছর সর্বোচ্চ ৯ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যার কারণ

আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্পর্কগত সমস্যার কারণে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এছাড়া, পারিবারিক সমস্যার কারণে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর্থিক সমস্যার কারণে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাদকাসক্ত হয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে আত্মহত্যা করেছেন ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ ভার্চ্যূয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে না পারা আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।”

আত্মহত্যার কারণগুলো বাইরে থেকে যতটা দেখা যাচ্ছে, সমস্যা তার চেয়েও গভীর উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ অপর্যাপ্ত বিধায়, তাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে তারা সেটা সামলাতে পারেন না। প্রেমে বিচ্ছেদ হলে তারা যেমন ভেঙে পড়ে, তেমনি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলও তাদেরকে আশাহত করে।”

প্রসঙ্গত, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ২০১৯ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে।

Link copied!