অক্টোবর ৪, ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম
বয়সের ভার কিংবা অসুস্থতার কারণে খুঁড়িয়ে হাঁটছে মিরপুর চিড়িয়াখানার এই বাঘটি। একবার পড়ে গেলে আর পাচ্ছে না ওঠার শক্তি। তাদের হিংস্রতা, লাফালাফি, দৌড়ে বেড়ানোর চিত্র দেখতে উৎসুক দর্শনার্থীরা করছে নানারকম অঙ্গভঙ্গি, তবে সে ডাকেও সায় দিচ্ছে না তারা। এদিকে খাঁচার একদম কাছে আসার পর দেখা যায়, এই ইমু পাখির গায়ের পালকগুলো ঝড়ে পড়েছে। আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে নাকি কোনো রোগের শিকার তা বলা দায়। হাতি পায়ের শেকল ঠেলে হাঁটতে পারছে না, তাই একবার সামনে একবার পেছনে পা বাড়িয়ে সচল রাখছেন শরীর।
এসব দৃশ্য দেখে মনে জন্ম নেয় নানাবিধ প্রশ্নের। তাই আমরা খুঁজি খাঁচার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। কোনো খাঁচায় কর্মীদের খুঁজে না পেয়ে যাই বিভিন্ন শাখার কার্যালয়ের সামনে। বৃহৎপ্রাণী তৃণভোজী শাখায় ঝুলছে তালা। সাধারণ দর্শনার্থীরা তো দূরের বিষয়, সংবাদকর্মী হিসেবে তথ্য সংগ্রহের জন্য খুঁজে পাওয়া যায়নি কাউকে। এরপর আমরা যাই মাংশাসী শাঁখার দিকে। সেখানে অবশ্য দুজনকে পেয়ে যাই। তারা কথা বলবেন না ক্যামেরার সামনে। তবে তথ্য চাইলেও তাদের দায়সারা ভাব।
তাদের কাছে তথ্য চাইলে ,তারা প্রস্তুত পাল্টা উত্তর নিয়ে। খাঁচায় কর্মী নেই সেই বিষয়ে আমলে না নিয়ে তারা বলেন, প্রত্যেকটি জায়গায় নেমপ্লেট বা বিস্তারিত লেখা আছে তা দেখে নিলেই তো হয়।
তার মানে কি দর্শনার্থীদের কোনো সহযোগিতার দরকার নেই? সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে দর্শনার্থীরাই।
আবার মাংশাসী শাখায় ফেরা যাক। সেই শুরুতে দেখানো বাঘের অসুস্থতার সম্পর্কে জানতে চাই মাংশাসী শাখার কাছে। তবে তারা দেখিয়ে দেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
এরপর আমরা যাই তথ্যকেন্দ্রে। সেখানে বলা হয় প্রত্যেক শাখায় শাখায় এবং খাঁচায় খাঁচায় কেউ না কেউ দায়িত্বে থাকার কথা। কিন্তু এখন কেন নেই জানেন না তারা।
এরপর জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতাল গিয়ে আমরা অসুস্থ কিংবা আয়ুস্কাল পেরোনো প্রাণীদের সম্পর্কে জানতে চাই। তবে এখানেও ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি নন কেউ।
তবে আমাদের তথ্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার লাইভস্টক অফিসার ড. নাজমুল হুদা। তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে এমন মোট ৭০টি প্রাণী রয়েছে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায়। আয়ুষ্কাল পার হওয়ার পরও প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে এদের। এ যাবত কেবল দুটি প্রাণীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে খাঁচা থেকে।
এদিকে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও প্রাণিকূলের আরও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ২রা সেপ্টেম্বর ১০ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছেন জাপান। তাদের পরিবর্তে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কেউ প্রস্তুত নন গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে।
খাঁচার সামনে উত্তর দেয়ার মত লোক নেই, বিভিন্ন শাখার কার্যালয়ে তালা, শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তারা দিবেন না প্রশ্নের উত্তর, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা না থাকলে কথা বলেন না তাদের পরিবর্তে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। সবই যখন ধোঁয়াশা, প্রাণীদের মত নির্বাক দেখভালকারীরাও, তখন দৃশ্যমান কেবল এই প্রাণিদের অসহায় আত্মসমর্পণ।