টানা ২৪ দিন পর অনশন ভাঙলেন রাশিয়ার কারাবন্দি পুতিন বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। নিজের চিকিৎসার দাবিতে গত ৩১ মার্চ থেকে অনশন শুরু করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) নাভালনির মৃত্যুর আশঙ্কা জানিয়ে তাকে অনশন ভাঙার আহ্বান জানান চিকিৎসকরা।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন তিনি। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে নাভালনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাভালনি জানান, দুই দফায় ডাক্তাররা তাকে দেখে গেছেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পিঠে তীব্র ব্যথা ও পায়ের অসাড়তার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে অনশনে গিয়েছিলেন ৪৪ বছরের এ রাজনীতিক। বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা নাভালনির পরিবার, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সহযোগীরা বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছেন, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয়। যে কোনও সময় তিনি মারা যেতে পারেন। নাভালনির স্বাস্থ্য নিয়ে দেশ-বিদেশে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে গত সোমবার তাকে কারা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর তার পাঁচজন চিকিৎসক এক বিবৃতিতে তাকে অনশন ভাঙার আহ্বান জানান।
পাঁচ চিকিৎসকের বিবৃতিটি বৃহস্পতিবার মিডিয়াজোনা নামের রাশিয়ার একটি স্বাধীন সংবাদ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতিতে চিকিৎসকেরা বলেন, ২০ এপ্রিল নাভালনির যেসব স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা (মেডিকেল টেস্ট) হয়েছে, তার ফল দেখার সুযোগ তাদের হয়েছে। পরীক্ষার সেই ফলের ভিত্তিতে পাঁচ চিকিৎসক বলেন, যদি সামান্য সময়ের জন্যও নাভালনির অনশন অব্যাহত থাকে, তাহলে দুঃখজনকভাবে তিনি শিগগিরই মারা যেতে পারেন।
চিকিৎসকদের এই বিবৃতি নিয়ে ক্রেমলিন প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি।
রাজধানী মস্কোর পূর্বের ভ্লাদিমির অঞ্চলের একটি হাসপাতালে নাভালনির স্বাস্থ্যগত পরীক্ষাগুলো করা হয়। এই পরীক্ষা ও তার ফলাফলকে মোটামুটি স্বাধীন হিসেবে বর্ণনা করেছেন নাভালনির চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, মেডিকেল টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতেই তারা একটি উপসংহারে এসেছেন।
চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলেন, নাভালনির কিডনি ও স্নায়ুব্যবস্থার (নার্ভ সিস্টেম) যে সমস্যা, তাতে তিনি আর অল্প সময়ও অনশন চালালে মারা যেতে পারেন। জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তাকে অনতিবিলম্বে অনশন থামানো উচিত। ওই বিবৃতির পরই অনশন বন্ধের ঘোষণা দেন নাভালনি।
২০২০ সালের আগস্টে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন নাভালনি। সে সময় তিনি সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে উড়োজাহাজে করে মস্কোয় ফিরছিলেন। যাত্রাপথে উড়োজাহাজেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বহনকারী প্লেনটি সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তিনি কোমায় চলে যান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন।
বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বরে জার্মান বিশেষজ্ঞরা জানান, নাভালনিকে রাশিয়ান নার্ভ এজেন্ট 'নোভিচক' প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরে অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞরাও একই অভিমত দেন। বিষ প্রয়োগের জন্য সরাসরি পুতিনকে দায়ী করেন নাভালনি। তবে পুতিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন।
দেশে ফিরলেই গ্রেফতারের হুমকি উপেক্ষা করে গত ১৭ জানুয়ারি জার্মানি থেকে দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। অর্থ আত্মসাতের পুরোনো মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে তকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এই দণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নাভালনি।