যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাচ্ছে ভারত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৩, ২০২৫, ০১:১২ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাচ্ছে ভারত

ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ ও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সরাসরি সাক্ষাতে এই চুক্তি স্বাক্ষর করবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের এক মুখপাত্র।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার হেগসেথ ও রাজনাথ সিং টেলিফোনে কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা মুখপাত্র কর্নেল ক্রিস ডেভাইন জানান, ওই কথোপকথনের সময় এই সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিনই হেগসেথ ওয়াশিংটনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

কর্নেল ডেভাইন বলেন, ‘১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে ভারতের গুরুত্বের কথা তিনি তুলে ধরেন। দুই নেতা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত যৌথ বিবৃতির আলোকে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা পর্যালোচনা করেন।’  

মার্কিন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ভারতের কাছে বিক্রির বিষয় এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্পে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই মন্ত্রী চলতি বছর আবার দেখা হলে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রতিরক্ষা কাঠামো স্বাক্ষরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।’ তবে কবে এই বৈঠক হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময় এখনো ঠিক হয়নি।

হেগসেথ ও জয়শঙ্করের সাক্ষাতের বিষয়ে ডেভাইন জানান, দুই পক্ষই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির যৌথ বিবৃতির আলোকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আগ্রাসনের ঝুঁকি নিয়ে দুই দেশেরই উদ্বেগ রয়েছে। এ নিয়ে তারা কথা বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের কয়েকটি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির বিষয়ে, নতুন ১০ বছরের প্রতিরক্ষা কাঠামো স্বাক্ষর, উন্নত প্রযুক্তিনীতির অগ্রগতিএসব নিয়েও আলোচনা হয়। পাশাপাশি উভয় দেশ ইন্ডাস-এক্স সামিট নামের দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সম্মেলন এবং স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শিল্প জোট এএসআইএ চালুর বিষয়টিও স্বাগত জানিয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, জয়শঙ্করের সঙ্গে এই বৈঠকে হেগসেথ বলেন, ‘ট্রাম্প ও মোদী আমাদের সম্পর্কের জন্য যে শক্ত ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন, আমরা তা আরও এগিয়ে নিচ্ছিবাস্তবসম্মত, ফলপ্রসূ ও যুক্তিসঙ্গতভাবে।’

হেগসেথ আরও বলেন, ‘ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার এক সমৃদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান ইতিহাস রয়েছে, যা উন্মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি আমাদের অভিন্ন অঙ্গীকার থেকে উৎসারিত। দুই দেশই অঞ্চলটির নিরাপত্তা উদ্বেগ সম্পর্কে সচেতন এবং সম্মিলিতভাবে এই হুমকির মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে।’

তিনি জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সফলভাবে যুক্ত হয়েছে, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘এ অগ্রগতির ভিত্তিতে আমরা কয়েকটি বড় প্রতিরক্ষা বিক্রির কাজ শেষ করতে চাই। পাশাপাশি যৌথ প্রতিরক্ষা শিল্প ও সহ-উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়াতে, দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় জোরদার করতে এবং দ্রুত নতুন ১০ বছরের প্রতিরক্ষা কাঠামো স্বাক্ষর করতে চাই।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে, তবে আরও অনেক কিছু করা সম্ভব। প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব আমাদের সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটা শুধু অভিন্ন স্বার্থের ওপর দাঁড়িয়ে নয়, বরং আমরা সক্ষমতা ও দায়িত্বের গভীর সমন্বয়ের ওপর বিশ্বাস করি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমরা যা করছি, সেটি এই অঞ্চলের কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুই দেশ পরবর্তী ‘ইন্ডিয়া-ইউএস ডিফেন্স অ্যাকসেলারেশন ইকোসিস্টেম সামিট’-এ অংশ নেবে। সেখানে প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা ও প্রযুক্তি ও উৎপাদনে নতুন উদ্ভাবনের ওপর জোর দেওয়া হবে। হেগসেথ বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে মুখিয়ে আছি। এই সহযোগিতা গভীর এবং অব্যাহত থাকবে।’

জয়শঙ্কর বলেন, ‘বিশ্ব দিন দিন জটিল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের পারস্পরিক অংশীদারত্ব শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং গোটা অঞ্চল এবং সম্ভবত গোটা বিশ্বের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মোদী ও ট্রাম্পের বৈঠকে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড মিসাইল ও স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান যৌথভাবে কেনা ও উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পাশাপাশি ছয়টি অতিরিক্ত পি-৮ আই সামুদ্রিক টহল বিমানের কেনার বিষয়েও আলোচনা হয়।

Link copied!