যৌতুকের জন্য নির্যাতিত নারীরা সরাসরি মামলা করতে পারবেন না, ক্ষেত্রবিশেষে যেতে হবে সালিসে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৩, ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম

যৌতুকের জন্য নির্যাতিত নারীরা সরাসরি মামলা করতে পারবেন না, ক্ষেত্রবিশেষে যেতে হবে সালিসে

ছবি: সংগৃহীত

যৌতুকের জন্য কোনো নারীকে তার স্বামী বা স্বামীর পরিবারের কেউ বা তার পক্ষে কেউ নির্যাতন করলেই সব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারীরা আর সরাসরি মামলা করতে পারবেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীকে মামলার আগে সালিসের পথে যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন করে নতুন যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, তাতে এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

১ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে। দেশে পারিবারিক সহিংসতা যখন বাড়ছে, তখন আইনের এ ধরনের পরিবর্তন নারী নির্যাতনের সঙ্গে সমাজে অস্থিরতা বাড়াবে বলে মনে করছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার নারীর মামলায় কোনো বাধা নেই। তবে নির্যাতন ও আঘাতের মাত্রা বিবেচনায় ভিন্ন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারার অপরাধের ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারীকে মামলার আগে মধ্যস্থতার পথে হাঁটতে হবে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীকে সাধারণ জখম (simple hurt) করলে তার শাস্তি অনধিক পাঁচ বছর, কিন্তু অন্যূন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড। উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও হবে।

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারী সরাসরি মামলা করতে পারবেন না। তাকে প্রথমে লিগ্যাল এইড অফিসারের কাছে আবেদন করতে হবে। সেখানে মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে যেকোনো পক্ষ মামলা করতে পারবে।

আইনের এই পরিবর্তনের ফলে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

ইশরাত বলেন, ‘নারীদের বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি করা হয়। এখন যদি নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আদালতে এসে মামলা করতে না পারেন, তাহলে নারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচার পাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। এতে নারীদের ওপর নির্যাতন আরও বাড়বে। বাড়বে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিরতাও।’ খবর আজকের পত্রিকা।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা হেল্পলাইন ১০৯-এ আসা ফোনকলের অর্ধেকই হলো পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ।

জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১০৯ হেল্পলাইনে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৬ ফোনকল আসে। ২০২৪ সালে পারিবারিক সহিংসতা-সম্পর্কিত ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৮টি ফোনকল আসে।

Link copied!