ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েল, এতে অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন।
সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সমুদ্র সৈকতের একটি জনপ্রিয় ক্যাফে, একটি স্কুল এবং খাদ্য ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছে। তারা একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়ে আরও বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, এদিনের এসব হামলায় গাজা সিটি ও ভূখণ্ডটির উত্তরাংশে অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে উত্তর গাজার সমুদ্রতীরবর্তী আল-বাকা ক্যাফেটেরিয়ায় চালানো হামলায়ই ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এখানে নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের পাশাপাশি বিশিষ্ট সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাবও রয়েছেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলাটি চালিয়েছে।
সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও দূরবর্তী কাজ যারা করেন তাদের কাছে গাজার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত এই ক্যাফে খুবই সুপরিচিত। ক্যাফেটিতে ইন্টারনেট ছিল, বসে থাকা এবং কাজ করারও সুবিধা ছিল।
ইয়াহিয়া শরিফ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা লোকজনের ছিন্নভিন্ন লাশ দেখেছি। এই জায়গাটির সঙ্গে রাজনীতি বা সামরিক কারও কোনো সম্পর্ক ছিল না। একটি জন্মদিনের পার্টি উপলক্ষ্যে ক্যাফেটি শিশুসহ লোকজনে ভরা ছিল।”
বোমার আঘাতে ক্যাফেটি ধ্বংস হয়ে গেছে আর সেখানে মাটিতে বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে। কোনো পূর্ব সতর্কতা না জানিয়েই হামলাটি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক।
এদিন ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির ইয়াফা স্কুলেও বোমাবর্ষণ করেছে। এই স্কুলটিতে কয়েকশ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।
হামলার আগেই ঘটনাস্থল ছেড়ে পালানো আবু জারাদেহ জানিয়েছেন, ওই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের পাঁচ মিনিটের মধ্যে সরে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
গাজা সিটির দক্ষিণপূর্বাংশে জাইতুনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১০ জন নিহত হন আর নগরীটির দক্ষিণপশ্চিমে আরও ১৩ জন নিহত হন। চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, নিহত ১৩ জনের অধিকাংশই গুলির আঘাতে মারা গেছেন; কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বিমান হামলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ও মার্কিন-ইসরায়েলি সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত গাজা হিউম্যানিট্যারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর সামনে খাবারের জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আকাশ হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এখানে এ হামলয় আহত হন আরও ১৫ জন।
গাজার মধ্যাঞ্চলে দিয়ের আল-বালাহার আল-আকসা হাসপাতালের প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এখানে তাদের হামলায় বহু ফিলিস্তিনি আহত হন।
খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বাহিনী ঘরবাড়ি ধ্বংস করাও শুরু করেছে। এতে সেখানে তারা স্থল অভিযান শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এখন গাজা ভূখণ্ডের ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে বা জোর করে বাস্তুচ্যুত করার হুমকির মধ্যে আছে।
ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডার্মারসহ দেশটির কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নতুন যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তার মধ্যেই গাজায় রক্তক্ষয়ী এসব হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।