জুলাই ১, ২০২৫, ০২:৩৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা করলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে নামবে।
তিনি বলেন, আমরা আজ জুলাই পদযাত্রা শুরু করেছি। পীরগঞ্জের পবিত্র মাটি থেকে, যেখানে আবু সাঈদ শায়িত আছেন। তার কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আমাদের পদযাত্রা শুরু করছি। আবু সাঈদ যেভাবে পুলিশের বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেটাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল। আবু সাঈদের মতো অন্য সকল শহীদেরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে আমাদের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিমসহ সকল শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের সময় এসব বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ পহেলা জুলাই—জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি শুরু হচ্ছে। ঠিক এক বছর আগে এই পহেলা জুলাই আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেছিলাম। যে আন্দোলনে আবু সাঈদসহ শরিক হয়েছিল হাজারো-লাখো তরুণ ছাত্র-জনতা।
কিন্তু সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে এই আন্দোলন গণবিস্ফোরণে রূপ নেয়, গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটায়। এই পতন ঘটাতে ভূমিকা পালন করেছিল আবু সাঈদের মৃত্যু। ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা যখন আমরা শহীদ মিনার থেকে শুনতে পেয়েছিলাম, পুরো বাংলাদেশ তখন শোকে-দ্রোহে কেঁপে উঠেছিল, বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে এই আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নেয়। হাজারো-লাখো ছাত্র-তরুণরা রাজপথে নেমে আসে, সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নতুন বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণা করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই পদযাত্রাকে বলছি দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা। আমরা স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছি। কিন্তু একটি নতুন দেশ গড়ার যে উদ্যোম দরকার, যে রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমাদের কাজ করা দরকার, সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্যই মূলত আমাদের এই জুলাই পদযাত্রা। এর মাধ্যমে আমরা সারাদেশের মানুষের সঙ্গে, ৬৪ জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলব, আমরা তাদের কথা শুনব। আবু সাঈদরা যে কারণে মারা গিয়েছিল সেই স্বপ্ন, সেই আকাঙ্ক্ষার কথা আমরা তাদের কাছে তুলে ধরব।
নাহিদ বলেন, আমি জাতীয় নাগরিক পার্টি ও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকল ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আবু সাঈদসহ সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণ করছি। আমাদের যে দাবি ছিল, বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান—সেই তিনটি দাবি আজ আবু সাঈদের কবর থেকে পুনর্ব্যক্ত করছি। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে।
তার ভাষ্য, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা হুশিয়ারি দিতে চাই, আপনারা যদি মনে করে থাকেন, যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকে—যারা রাজপথে নেমেছিল, তারা ঘরে ফিরে গেছে, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন।
আমরা আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি, আমরা বাংলারা প্রতিটি পথে-প্রান্তরে যাব, বাংলার ছাত্র-জনতা-তরুণ-শ্রমিকদের আবার রাজপথে নামার আহ্বান জানাব। আমরা ৩ আগস্ট ঢাকায় আসছি, আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় ঢুকব এবং জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায় করে ছাড়ব, যোগ করেন তিনি।