জুলাই ১, ২০২৫, ০২:০১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ম্যাচের আগে যা ছিল অভাবনীয়, অনেকের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না যা, সেটিই রচিত হলো ক্লাব বিশ্বকাপের মঞ্চে। রূপকথার জয়ে ম্যানচেস্টার সিটিকে বিদায় করে কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছে গেল আল হিলাল।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় শেষ হওয়া ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো রোমাঞ্চে ঠাসা ম্যাচে পেপ গার্দিয়োলার দলকে ৪-৩ গোলে হারায় সৌদি আরবের ক্লাবটি।
এই টুর্নামেন্টের ঠিক আগে দায়িত্ব পাওয়া সিমেনো ইনজাগির কোচিংয়ে প্রথম ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে ঠেকিয়ে দিয়েছিল আল হিলাল। এবার শেষ ষোলোর লড়াইয়ে তারা উপহার দিল আরও বড় চমক।
আল হিলালের জয়ের নায়ক মার্কোস লেওনার্দো। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা দলকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফেরান ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। পরে ১১৩তম মিনিটে জয়সূচক গোলটিও করেন তিনি।
আরেক ব্রাজিলিয়ান মালকমও করেন একটি গোল। আল হিলালের বাকি গোলটি করেন সেনেগালের ডিফেন্ডার কালিদু কুলিবালি।
ম্যাচজুড়ে অসাধারণ পারফরম্যান্সে বারবার দলকে রক্ষা করেন আল হিলালের গোলকিপার বোনু।
ম্যান সিটির হয়ে জালের দেখা পান বের্নার্দো সিলভা, আর্লিং হলান্ড ও ফিল ফোডেন।
অরল্যান্ডোর ক্যাম্পিং ওয়ার্ল্ড স্টেডিয়ামে বল নিয়ন্ত্রণে রাখা, গোলে শট, সব পরিসংখ্যানেই অনুমিতভাবেই বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচের ৬৯ শতাংশ সময় বল ছিল তাদের কাছে। গোলে ৩০টি শট নেয় তারা, এর ১৪টি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু কাজে লাগে কেবল ৩টি।
আল হিলাল গোলে শট নেয় ১৭টি। তবে লক্ষ্যে ছিল কেবল ৬টি। এর ৪টিতেই সফল হয়ে বাজিমাত করে তারা।
ম্যাচের নবম মিনিটে জটলা থেকে গোল করে সিটিকে এগিয়ে দেন বের্নার্দো সিলভা। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায়, সিটির আলজেরিয়ান ডিফেন্ডার রাইয়ান আইত-নুরির কবজি ছুঁয়ে এসেছিল বল। তবে আল হিলালের ফুটবলারদের জোর প্রতিবাদে কান দেননি রেফারি।
২৪তম মিনিটে আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ পায় সিটি। এবার হলান্ডের পাস থেকে বক্সের ভেতর বল পেয়ে সাভিনিয়ো গোলকিপার বোনুকে কাটিয়ে যান। কিন্তু বোনু হাল ছাড়েননি। নিজেকে দ্রুত সামলে নিয়ে সাভিনিয়োর শট ঠেকিয়ে দেন তিনি।
সিটির আক্রমণ চলতে থাকে। ৩০, ৩৮ ও ৪৪তম মিনিটে তিন দফায় দলকে রক্ষা করেন বোনু।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে বদলে যায় চিত্র। প্রথম মিনিটেই সমতায় ফেরে আল হিলাল। বিপজ্জনকভাবে বল নিয়ে সিটির বক্সে ঢুকে যান মালকাম। জটলার মধ্যে এক পর্যায়ে তার শট ফিরিয়ে দেন সিটির গোলকিপার এদেরসন, কিন্তু সিটির একজনের পায়ে লেগে আসা বলে হেড করে জালে পাঠান লেওনার্দো।
ছয় মিনিট পর আল হিলাল এগিয়ে যায় চোখধাঁধানো এক পাল্টা আক্রমণে। নিজেদের বক্সের ঠিক বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক পাস বাড়ান জোয়াও কান্সেলো। মাঝমাঠের একটু ওপর থেকে বল নিয়ে গুলির বেগে এগিয়ে যান মালকাম, সিটির বক্সে ঢুকে গোলকিপারকে পরাস্ত করেন তিনি নিখুঁত ফিনিশিংয়ে।
মিনিট তিনেক পরই কর্নার থেকে জটলার মধ্যে হলান্ডের টোকায় সমতায় ফেরে সিটি।
সিটি এরপর দফায় দফায় আক্রমণ করতে থাকে। কিন্তু কখনও অল্পের জন্য বল চলে যায় বাইরে দিয়ে, কখনও বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান বোনু। ৮৫তম মিনিটে বোনুর দারুণ এক সেভের পর ফিরতি বলে গোললাইন থেকে কোনোমতে রক্ষা করেন আল হিলালের আলি লাজামি। একটু পরই বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া রুবেন দিয়াসের জোরাল শট ঠেকান বোনু।
৯০ মিনিট শেষে অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে রুবেন নেভেসের কর্নার থেকে দারুণ হেডে আল হিলালকে এগিয়ে দেন কুলিবালি।
১০৪তম মিনিটে গোছানো আক্রমণ থেকে হায়ান শেহকির অসাধারণ ক্রস থেকে ফোডেনের চমৎকার ফিনিশিংয়ে আবার সমতায় ফেরে সিটি।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি গুয়ার্দিওলার দলের। ১১৩তম মিনিটে সের্গেই মিলিনকোভিচের হেড ডাইভ দিয়ে রক্ষা করেন সিটি গোলকিপার, কিন্তু বল যায় সামনেই থাকা লেওনার্দোর কাছে। বল তার পেটে লাগার পর তিনি পড়িমরি করে পড়ে গেলেও কোনেরকমে পা ছুঁইয়ে পাঠাতে পারেন জালে।
পরের সময়টায় গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সিটি। এর ফাঁকে সুযোগ পেয়ে পাল্টা আক্রমণ করে আল হিলাল। কিন্তু দুই দলের খেলায়ই তো ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কোনো দলই আর গোল করতে পারেনি।
এ দিনের আগের এক ম্যাচে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রানার্স আপ ইন্টার মিলানকে ২-০ গোলে হারিয়ে চমক দেখায় ফ্লুমিনেসি। তাদের সঙ্গেই কোয়ার্টার-ফাইনালে লড়বে আল হিলাল। এটি তাই নিশ্চিত, সেমি-ফাইনালে খেলবে ব্রাজিল কিংবা সৌদি আরবের একটি ক্লাব।