জুন ২৪, ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
লালমনিরহাটে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত বাবা ও ছেলেকে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে হেনস্তা ও পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি মনে করে, এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কার্যকর করা জরুরি বলে জানিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার, ২৪ জুন এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের অভিযোগ তুলে রোববার একদল লোক লালমনিরহাট শহরের একটি সেলুন থেকে পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল (৩৫)-কে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানো ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তবে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে, তা প্রচলিত আইন অনুযায়ী সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মব তৈরি করে কাউকে হেনস্তা করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি শুধু আইনের শাসনের বিরুদ্ধে যায় না, বরং সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও বিনষ্ট করে।
আসক মনে করে, ধর্মীয় অনুভূতি বা অবমাননার অভিযোগ অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায়, এই ধরনের অভিযোগে তদন্তের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং প্রমাণভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। কোনো ব্যক্তির নিরাপত্তা, আইনি সহায়তা ও সম্মান বিনষ্ট না করেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে হবে। ধর্মীয় বিষয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো যেমন আইনসম্মত নয়, তেমনি অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করা, নিপীড়নের মুখে ঠেলে দেওয়া বা সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়াও সমানভাবে নিন্দনীয়।
আসক আরও মনে করে, অতীতে এ ধরনের ঘটনার পর যথাসময়ে প্রচলিত আইন প্রয়োগ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় না আনার ফলে এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসক এ ধরনের ‘মব’ এ জড়িতদের বিচার দাবি করেছে।
আসক মনে করে, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা এবং ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষাসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কার্যকর করা জরুরি। সংস্থাটি যেকোনো উসকানি, মিথ্যা প্রচারণা কিংবা সংঘবদ্ধ প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বিশেষকে শনাক্ত করে কঠোরভাবে জবাবদিহির আওতায় আনতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।