জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র বিতণ্ডা বিরাজ করেছে। নিইউয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও রেকর্ডকৃত ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতকে তীব্র তিরস্কার করে মুসলমানদের ওপর ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে দেশটিকে ইঙ্গিত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করেন, কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসবাদকে ‘কূটনৈতিক চাল’ হিসাবে কাজে লাগায়।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ভারতকে মুসলমানশূন্য করার পরিকল্পনা করার অভিযোগও তোলেন ইমরান খান।
ভারতে ইসলামফোবিয়া কাজ করছে
কাতারভিত্তিক আলজাজিরার খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে এখন সবচেয়ে বাজে ও বিশাল রূপে ইসলামফোবিয়া (ইসলামভীতি) কাজ করছে। ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপি শাসন দ্বারা প্রচারিত ঘৃণায় ভরা হিন্দুত্ববাদী আদর্শ ভারতের ২০ কোটির বেশি মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর ভয় ও সহিংসতার রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।’
মোদি সরকার ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেখানে নাগরিকত্ব আইন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ আইনকে সমালোচকেরা বৈষম্যমূলক বলে অভিযোগ করছেন। দেশটিতে এ নিয়ে একাধিক ধর্মভিত্তিক সহিংসতা ঘটেছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের দিন ইমরান খান তাঁর বক্তব্য দেন। ইমরান খান অভিযোগ করেন, ভারতের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণেই সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্পূর্ণ দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে।
ইমরানের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা ভারতের
ওইদিন নরেন্দ্র মোদি কোনো জবাব না দিলেও জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবে ইমরান খানকে কড়া জবাব দেন। তিনি আল-কায়েদাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন।
ইসলামাবাদের দিকে অভিযোগের তীর উঁচিয়ে স্নেহা দুবে বলেন, ‘দেশটি নিজেকে অগ্নিনির্বাপক হিসেবে গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। কিন্তু আসলে পাকিস্তান ছদ্মবেশী অগ্নিসংযোগকারী।’ স্নেহা অভিযোগ করেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের তাদের বাড়ির উঠানে লালনপালন করে এই আশায় যে তারা শুধু প্রতিবেশীদের ক্ষতি করবে।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংখ্যালঘুদের ওপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহিংসতা চালানোর পাশপাশি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের ফার্স্ট সেক্রেটারি। ভারতে বহুত্ববাদী গণতন্ত্র রয়েছে উল্লেখ করে স্নেহা দুবে আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে।’
স্নেহা দুবে বলেন, পাকিস্তান আসলে সন্ত্রাসবাদকে অবাধে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। এমনিতেই গোটা বিশ্ব জানে পাকিস্তান কীভাবে সন্ত্রাসকে মদত দেয়। কীভাবে সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক সহায়তা করে প্রশিক্ষণ দেয়।
অনৈতিকভঅবে কাশ্মীরের একটি অংশ পাকিস্তান দখল করে রেখেছে অভিযোগ করে ভারতের এই কূটনীতিক আরও বলেন, কাশ্মীরের ওই অংশ যত তাড়াতাড়ি পাকিস্তান ছেড়ে দেবে ততই মঙ্গল।’
সন্ত্রাসবাদকে ‘কূটনৈতিক চাল’ হিসাবে কাজে লাগায় পাকিস্তান
স্নেহা দুবের পর শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নরেন্দ্র মোদি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে ডিপ্লোমেটিক ভাষায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসবাদকে ‘কূটনৈতিক চাল’ হিসাবে কাজে লাগায়। তবে জঙ্গিরা যে তাদের কাছেও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে সে সতর্কবাণীও উচ্চারণ করেন তিনি।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের শিকড় ক্রমেই গভীরের দিকে যাচ্ছে। তালেবানকে ক্ষমতায় আনতে চালিকাশক্তির ভূমিকায় দেখা গেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই(ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। শনিবারও তাই নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, তিনি ‘আজ গোটা দুনিয়ায় প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনা এবং চরমপন্থার বাড়বাড়ন্ত।’ এ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির স্পষ্ট বার্তা, ‘এমন পরিস্থিতিতে গোটা দুনিয়ারই উচিত, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত, যুক্তিবাদী এবং প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া।’
কে এই স্নেহা দুবে?
রাষ্ট্রসংঘে ইমরান খানকে জবাব দেওয়ার পরই ভারতসহ বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর শিরোনামে উঠে আসেন স্নেহা দুবে। স্নেহার জন্ম গোয়ায়। প্রাথনমিক পড়াশোনাও সেখানেই। পরবর্তীকালে জওহরলাল নেহরু ইউনাভর্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে এমফিল করেন স্নেহা। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি ফরেন সার্ভিসে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। তখন থেকেই বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতির প্রতি তাঁর আগ্রহ ডন্মায়।
২০১১ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসে প্রথম বারেই উত্তীর্ণ হন। স্নেহার বাবা একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করতেন। মা ছিলেন স্কুলের শিক্ষিকা। পরিবারে স্নেহাই প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ভঅরতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন তিনি।