অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের ইতালি যাওয়া ঠেকাতে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া ও মরক্কোর কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযান চালিয়ে গত ছয়দিনে ৫৭৬ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে। তিউনিশিয়া ও মরক্কো কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি ও চীনের সিনহুয়ার খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
উন্নত জীবন আর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি জুলাই মাসে এই প্রচেষ্টার সংখ্যা বেশি বেড়ে গেছে। তবে সাগরে টহল জোরদার হওয়ায় বেশিরভাগই স্বপ্নের ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশে ব্যর্থ হচ্ছেন।
গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) ও শনিবার (২৪ জুলাই) তিউনিশিয়া ও মরক্কোর কোস্টগার্ড সদস্যরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তিউনিশিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে অভিবাস প্রত্যাশীদের ১৬টি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। এসময় ১৫৫ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে।
তিউনিশিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের মুখপাত্র হউস্সম এদ্দিন আল-জাবালি বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে তার ভ্যারিফাইড ফেসবুকে লিখেন, ন্যাশনাল গার্ড শুক্রবার ও শনিবার অবৈধভাবে তিউনিসিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে অভিবাসীদের ১৬টি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। এসময় ১৫৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১০জন পলাতক আসামি ছিলেন।
তিউনিসিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের এই মুখপাত্র আরও বলেন, তিউনিসিয়ার মাহদিয়া প্রদেশে শনিবার (২৪ জুলাই) দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় ৫৩ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, মরক্কোর নৌবাহিনীর সদস্যরা গত চারদিনে ভূমধ্যসাগর থেকে ৩৬৮ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) মরক্কোর সেনাবাহিনী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়,উদ্ধার হওয়া এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেশিরভাগই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তারা সবাই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
কেন ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ?
অবৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনা বেড়েই চলেছে। অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে ভূমধ্যসাগরে নজরদারি বাড়লেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে সাগর পাড়ি দিচ্ছেন।
উন্নত জীবন আর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অবৈধভাবে যারা ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশ করতে চায়, তাদের জন্য সুবিধাজনক জায়গা হচ্ছে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিকেরা উন্নত জীবন গড়া ও ভাগ্যের চাকা বদলানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা উপায়ে লিবিয়া পৌঁছে। তারপর দেশটির জুয়ারা উপকূল থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ইতালি পৌঁছে থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে অনেকের মৃত্যু ঘটে।
নৌকাডুবির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি
গত ২১ জুলাই অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় অভিবাসনপ্রত্যাশী ১৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।এসময় তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা ৩৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রিসেন্ট তিউনিশিয়া শাখা জানায়।
তিউনিশিয়া রেডক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মংগি স্লিমের বরাত দিয়ে স্থানীয় সময় বুধবার (২১ জুলাই) সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল জুয়ারা থেকে অভিবাসপ্রত্যাশীদের নিয়ে ওই নৌকাটি ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ভূমধ্যসাগরে তিউনিশিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। পরে ওই ডুবে যাওয়া নেীকা থেকে ১৭ বাংলাদেশির মরদেহ ও ৩৮০ জনের বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশসহ সিরিয়া, সুদান, মিশর, মালি ও ইরিত্রিয়ার এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়া থেকে নৌকাযোগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলেও তিউনিশিয়ান রেডক্রিসেন্টের ওই কর্মকর্তা জানান।
এর আগে,গত ০৮ জুলাই অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় আফ্রিকার তিউনিশিয়ার উপকূলে এবটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ওই নৌকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী ৪৯ জন বাংলাদেশিকে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার করে।
এরও আগে, ২০১৯ সালের মে মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে অন্তত ৪০ বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু ঘটে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা- ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) তথ্যমতে চলতি বছরের জানয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাসে আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি ও মাল্টা যাওয়ার পথে পাঁচ শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছেন।