জাতীয় নির্বাচনের একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে ইসি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৪:১৮ পিএম

জাতীয় নির্বাচনের একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে ইসি

ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন।

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট বেলা আড়াইটায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। 

ব্যস্ত থাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) অবশ্য এই বৈঠকে ছিলেন না। ইসি সচিব জাপানে রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আমরা বৈঠক শুরু করলাম। অনেকগুলো বিষয় থাকায় আজকের মধ্যে সবকিছু প্রস্তুত করে রোডম্যাপ ঘোষণা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোববার সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সার্বিক অগ্রগতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও জানাতে হবে।

“এরপর রোডম্যাপ চূড়ান্ত করে জানানো হবে,” বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।

গেল ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন।

পরদিন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, ভোটের তারিখের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশন সভায় আলোচনা শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেবে ইসি।

তফসিল সামনে রেখে এ সপ্তাহে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা বলেছিলেন ইসি সচিব।

এবারের রোডম্যাপে কী থাকছে, সেই ধারণ দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, তারা অক্টোবরের মধ্যে ‘মূল প্রস্তুতি’ সেরে ফেলতে চান।

এ সময়সীমার মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার, আচরণবিধিমালা জারি ও ভোটার তালিকার মতো বিষয় চূড়ান্ত করে ফেলার কথা রোডম্যাপে তুলে ধরা হবে।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নেয় এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন।

অন্য নির্বাচন কমিশনাররা হলেন- আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ইসি সচিব হিসেবে রয়েছেন আখতার আহমেদ।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারসহ নানা সংস্কারের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজও চলে। সার্বিক সংস্কার বিবেচনায় রেখে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছে ইসি।

২০২৫ সালের শুরুতেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়; ভোটার দাঁড়ায় ১২ কোটি ৩৭ লাখের বেশি। এ ধারাবাহিকতায় অন্য কাজও চলমান রয়েছে।

ইসির কাজের সার্বিক অগ্রগতি

ভোটার তালিকা

>> প্রায় ৪৬ লাখ বাদ পড়া ভোটারের হালনাগাদের খসড়া প্রকাশ।

>> চূড়ান্ত তালিকা ৩১ আগস্ট; আর সম্পুরক তালিকা অক্টোবরে।

দল নিবন্ধন

>> বাছাই শেষে বাদ ১২১টি আবেদন, টিকে গেছে ২২টি দল। এসব দলের কার্যকারিতা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চলছে।

সীমানা নির্ধারণ

>> ৩০০ আসনের খসড়া প্রকাশ।

>> ১০ আগস্টের মধ্যে ৮২টি আসনে ১৭৬০টি দাবি আপত্তি আবেদন জমা পড়ে।

>> শুনানি চলবে ২৪-২৭ আগস্ট। তারপর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ।

নির্বাচন পযবেক্ষক

>> অন্তত ৩১৮টি সংস্থার আবেদন বাছাই করছে কমিটি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)

>> ছোটোখাটোসহ অন্তত ৪৪টি সংস্কার চূড়ান্তের পর্যায়ে; আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

>> দল ও আচরণবিধি অনুমোদিত; আরপিও সংস্কার সাপেক্ষে জারি হবে।

>> প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি প্রক্রিয়াধীন, চূড়ান্ত হলে পদ্ধতি নিয়ে প্রচারণা।

নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা

>> সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা।

রোডম্যাপ প্রকাশ

>> রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রকাশ হতে পারে এ মাসে।

>> সংলাপ, মতবিনিময়, বৈঠক, ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ, মুদ্রণ, বাজেট বরাদ্দ, আইটি ভিত্তিক প্রস্তুতি, প্রচারণা, সমন্বয় সেল, আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে যাবতীয় কর্মপরিকল্পনা মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্য খাত ও বাস্তবায়নসূচি রয়েছে।

>> তফসিলের আগে ও পরের কাজ ঠিক করে সম্ভাব্য বাস্তবায়ন সময় ধরে প্রস্তুতি।

রোডম্যাপের ধারাবাহিকতা 

নির্বাচন কমিশন প্রাক-নির্বাচন ও তফসিল পূর্ববর্তী ‘প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা’ এবং তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সূচি’ সংক্রান্ত করণীয় কাজের তালিকা তৈরি করে কাজের সুবিধার জন্য।

২০০৭-২০০৮ সালে প্রথমবারের মত রোডম্যাপ ঘোষণা করে তৎকালীন ইসি। ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই দেড় বছরের রোডম্যাপ দেওয়া হয়, সেখানে ২০০৮ সালে অক্টোবর-ডিসেম্বরে তফসিল ও ভোটের সময়সূচি ধরা হয়। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন শুরু হয়। আইন-বিধি সংস্কার, দল নিবন্ধনের পর সেই ভোটার তালিকা দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়।

পরবর্তী সময়ে বিষয়টি রোডম্যাপ বা অ্যাকশনপ্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা বা চেক লিস্ট (করণীয় কাজের তালিকা) নামে পরিচিতি পায়। 

দশম সংসদ নির্বাচনের দুই বছর আগে রোডম্যাপ ঠিক করে তৎকালীন ইসি।

একাদশ সংসদ ২০১৮ সালে অক্টোবরের মাঝামাঝি ভোটের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নসূচি অনুমোদন করে তৎকালীন কমিশন।

সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ অনুষ্ঠান করে তখনকার ইসি। 

তফসিলের আগে-পরে যত কাজ

>> ভোটার তালিকা, আইন-বিধি-নীতিমালা সংস্কার, সংলাপ, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নতুন দল নিবন্ধন।

>> প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণ, দেশের অভ্যন্তরে তিন ধরনের ব্যক্তির পোস্টাল ব্যালট প্রস্তুত।

>> তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সংসদীয় আসন অনুযায়ী ৩০০ এলাকার তালিকা প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ।

>> প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন।

>> প্রার্থীদের জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত।

>> ছবিসহ ও ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি মুদ্রণ।

>> সম্পূরক ভোটার তালিকার সিডি রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে সরবরাহ।

>> বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের জন্য হেল্পডেস্ক করতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ; নিয়মিত সংবাদ অবলোকন করে কমিশনকে জানাতে টিম গঠন; সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা; সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সভা পরিকল্পনা।

>> নির্বাচনে ব্যবহৃত সব ফরম, প্যাকেট মুদ্রণ সম্পন্ন। ব্যালট বাক্স, লকসহ নির্বাচনি সরঞ্জামের মজুদ পরীক্ষা করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের জানানো।

>> মনোনয়নপত্র দাখিলে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন ফরম (ফরম-১, ফরম ২, ফরম-৩), প্যাকেটসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ। নির্বাচনি সরঞ্জাম- স্ট্যাম্প প্যাড, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, অফিসিয়াল সিল, গালা ইত্যাদি সংগ্রহ।

>> ভোটের জন্য সব ব্যালট বাক্স পুনরায় যাচাই ও ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা।

>> ম্যানুয়েল মুদ্রণ শেষ করে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো।

>> মাঠ পর্যায় থেকে ভোটকেন্দ্রের তালিকা কমিশনের অনুমোদনের জন্য নির্দেশনা (তফসিল ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে)।

>> বিভিন্ন প্রকার ম্যানুয়াল ও নির্দেশিকা মুদ্রণ; ভোটের ফল প্রদর্শন, প্রচার, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন (ভোটের ১৫ দিন আগে)।

>> আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, ঋণখেলাপিদের তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ভোট গণনার বিবরণী, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি গঠনসহ সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি।

>> ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রাথমিক প্যানেল প্রস্তুতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা সংগ্রহে নির্দেশনা; তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসার প্যানেল চূড়ান্ত করা।

>> উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শূন্যপদ পূরণে জনপ্রশাসনকে অনুরোধ; সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে এবং অফিস সময়ের পরে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা।

>> ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ অনুসারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নির্ধারণ করে রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ; ভোটের ১৫ দিন আগে নিয়োগ চূড়ান্ত ও প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত নির্দেশনা।

>> আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তাব ও সভার পরিকল্পনা; বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা পাঠানো সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন (তফসিল ঘোষণার পর কার্যক্রম গ্রহণ)।

প্রশিক্ষণ ও প্রচার

>> ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ও জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন; প্রশিক্ষণ।

>> তফসিলের আগে-পরে ও ভোটের দিনের কাজ বিবেচনায় নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা, বাজেট বরাদ্দ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, সরকারের সব ধরনের সহায়তা, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় সেল গঠন, ব্যালট পেপার ও নির্বাচনি সামগ্রী আনা নেওয়াসহ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নানাবিধ কাজ।

>> ফল সংগ্রহ ও পরিস্থিতি প্রতিবেদন।

Link copied!