গত সপ্তাহে পূর্ব স্পেনে প্রবল বৃষ্টিপাতে নদীসহ শুষ্ক খালগুলো প্লাবিত হয়ে হঠাৎ বন্যার সৃষ্টি করে। এতে বসতি এলাকা তলিয়ে যায় এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
বন্যার প্রভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অঞ্চলটি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া এলাকা। ২৯ অক্টোবরের বন্যার এক সপ্তাহ পরেও মৃত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রম চলমান।
ভয়াবহ এ বন্যায় ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলেই ২১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেশী কাস্তিলা লা মঞ্চায় আরও সাতজন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুসিয়ায় আরও একজন মারা গেছেন।
সরকারিভাবে ৯৩ জনকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। এখনও ৫৪টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার ৬০৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে বন্যার মতো চরম ঝুঁকির ক্ষেত্রে বিমা পরিশোধকারী পাবলিক-প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান স্পেনের কনসোর্টিয়াম ফর ইন্স্যুরেন্স কমপেনসেশন অনুমান করছে, তারা ক্ষতিপূরণে অন্তত ৩.৫ বিলিয়ন ইউরো (৩.৮ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে।
কনসোর্টিয়ামটি বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য ১,১৬,০০০ বিমার আবেদন পেয়েছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ দাবি গাড়ির এবং ৩১ শতাংশ বাড়ির জন্য। স্পেনের অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিধারণা করছে, এই বন্যা বিমা ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড তৈরি করবে।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার (১৪৪ মাইল) সড়ক ও রেলপথ মেরামত করলেও ভ্যালেন্সিয়া ও মাদ্রিদের মধ্যে দ্রুতগামী ট্রেন লাইনটি এখনও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।
পরিবার, ব্যবসা ও টাউনহলের জন্য ১০.৬ বিলিয়ন ইউরো (১১.৬ বিলিয়ন ডলার) ত্রাণ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভ্যালেন্সিয়া আঞ্চলিক সরকার মাদ্রিদের কাছে ৩১ বিলিয়ন ইউরো (৩৩ বিলিয়ন ডলার) সহায়তা চেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত দুই বছর ধরে দেশটিতে যে খরা চলছে এবং রেকর্ড তাপমাত্রা বন্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ২৯ অক্টোবর ভ্যালেন্সিয়ার তুরিস শহরে এক ঘণ্টায় ৩০.৪ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। বিপর্যস্ত চিভা গ্রামেও আট ঘণ্টায় এত বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ২০ মাসের সম্মিলিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ঝড়ের তীব্রতা ম্যাগ্রো ও তুরিয়া নদী এবং পোয়ো খালে কেন্দ্রীভূত হয়, যা তীব্র স্রোতে পরিণত হয়ে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মানুষের চোখে এটি যেন একটি সুনামির মতো পানি ও কাদার ঢেউ ছিল, যা ভ্যালেন্সিয়া শহরের দক্ষিণ প্রান্ত জুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন রেখে গেছে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি জানায়, ৩১ অক্টোবরের স্যাটেলাইট ছবি অনুযায়ী, ১৫ হাজার ৬৩৩ হেক্টর (৩৮ হাজার ৬০০ একর) এলাকা জুড়ে পানি ঢুকেছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের জরুরি অভিযানে ১৭ হাজারের বেশি সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছে।
এই অভিযানে ৮,০০০ সৈন্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২,১০০ জন দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ায় বিশেষায়িত সামরিক জরুরি ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত।এছাড়া স্পেনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ৯,২০০ অতিরিক্ত পুলিশ কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন, ঠিক কতজন আছেন তার কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। তারা প্রথম দিন থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সহায়তা করেছেন।
দেশটির সরকার জানায়, বন্যার পর প্রথম সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ৪৭ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করেছে এবং পানীয় জল নেই এমন জায়গায় প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার বোতল পানি বিতরণ করেছে।
স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ এখনও জানায়নি, তারা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কতগুলো কল পেয়েছে। সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির একটি অনুমান দিয়েছে বা কতটা জমি ধ্বংস হয়েছে তার একটি গণনা প্রকাশ করেছে। এই মুহূর্তে, পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা কখন শেষ হবে তা কেউ অনুমান করতে পারে না।