‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ ও ‘পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী’ কারা?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৪, ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম

‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ ও ‘পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী’ কারা?

ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার ৩ জুন, বাংলাদেশ সরকার ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ সংশোধন করে প্রথমবারের মতো “বীর মুক্তিযোদ্ধা” এবং “মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী” –এই দুটি শ্রেণিকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। সংশোধিত এই আইনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কারা ছিলেন, তাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’?

আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেননি কিন্তু পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন, তারাই ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন—

প্রবাসী সহায়ক: যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সহায়তা ও তথ্য আদানপ্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

প্রশাসনিক ও চিকিৎসা সহায়তাকারী: যারা মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত ছিলেন।

গণপ্রতিনিধি: যেসব এমএনএ (জাতীয় পরিষদ সদস্য), এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য), কিংবা গণপরিষদের সদস্য মুজিবনগর সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছেন।

সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক প্রচারক: যারা বিদেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, কনসার্ট বা কূটনৈতিক প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ— জর্জ হ্যারিসনের আয়োজিত “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ”-এ অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা: যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে অর্থ সংগ্রহ ও জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন।

কারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত?

সংশোধিত আইনে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সরাসরি সহায়তা প্রদানকারী গোষ্ঠীগুলোকে “সহযোগী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে—রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটি।  

সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের’ জন্য পাঁচটি শ্রেণি ঠিক করা হয়েছে।

প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) বা এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন।

চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক।

পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ২১ জন সদস্য এত দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হতেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাহউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান খান। এখন থেকে তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

Link copied!