ছবি: সংগৃহীত
পার্বত্য এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) দুই দফায় ৩২ হাজার ইউনিফর্মের (পোশাক) পর এবার আরও ১৫ হাজার ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দিনগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীর নূর ফ্যাশন নামের গার্মেন্টস কারখানা থেকে এসব পোশাক উদ্ধার করা হয়।
কুকি-চিনের এই ১৫ হাজার পোশাক উদ্ধারের পাশাপাশি নূর ফ্যাশনের মালিক আব্দুল মতিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরির কাজ দিয়েছে চট্টগ্রামের নানা এলাকায়। ছোট ছোট কারখানাতে তারা ভাগ করে দিয়েছে এসব পোশাক তৈরির কাজ।
কুকি-চিনের ১৫ হাজার ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনায় নূর ফ্যাশনের কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, মূলত বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকার রিংভো গার্মেন্টস থেকে তারা ২২ হাজার ইউনিফর্ম বানানোর অর্ডার পায়। দুদিন আগে তারা জানতে পারে, এগুলো অবৈধ পোশাক। গতকাল রাতে পুলিশ গিয়ে ৬৩টি বস্তায় ১৫ হাজার পোশাক নিয়ে যায়।
নূর ফ্যাশনের ফিনিশিং ইনচার্জ হাসিবুর রহমান দাবি করেছেন, তারা ২২ হাজার পোশাক বানানোর অর্ডার পেয়েছিলেন। সে সময় তাদের জানানো হয় এগুলো বিদেশি আনসারের জন্য। এসব যে পাহাড়ের একটি সংগঠনের জন্য সেটা তারা জানতেন না।
নূর ফ্যাশনের কর্মচারী আনোয়ার হোসেন মানিক বলেন, ‘কিছু কাপড় ডেলিভারি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু টাকা দিতে গড়িমসি করাতে আমরা কাজ বন্ধ করে দেই। এ কারণে শ্রমিকের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। বায়েজিদ থানা পুলিশ মঙ্গলবার দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে ৬৩টি বস্তায় কাপড়গুলো নিয়ে যায়। তারা কারখানা মালিক আব্দুল মতিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।’
গত ১৭ মে রাতে বায়েজিদ থেকে ২০ হাজার ও গত রোববার রাতে বায়েজিদ এলাকার গুদাম থেকে কুকি-চিনের ১২ হাজার পোশাক উদ্ধার হয়। গত রাতে পাহাড়তলী থেকে ১৫ হাজার ইউনিফর্মসহ মোট উদ্ধার হলো ৪৭ হাজার পোশাক। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ জনকে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার হোসাইন মো. কবির ভূইয়া বলেন, ‘এমন একটা ঘটনা আছে। পাহাড়তলী থানা বিস্তারিত জানাবে।’
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ বলেন, ‘কুকি-চিনের পোশাক উদ্ধার নিয়ে একটা মামলা প্রক্রিয়াধীন। বায়েজিদ থানা পুলিশ কুকি-চিনের পোশাক উদ্ধার নিয়ে তদন্ত করতে পাহাড়তলী এলাকায় আরও কাপড় তৈরি হচ্ছে বলে খবর পায়।’
এদিকে গত সোমবার রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়াহাট এলাকার একটি কারখানার গুদাম থেকে প্রায় ১২ হাজার পোশাক জব্দ করেছে থানা পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নগর পুলিশের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কুকি-চিনের বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তদন্ত করে পোশাক উদ্ধারে অভিযান চলমান রাখব।’
এর আগে ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ইউনিফর্মগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়।