ছবি: সংগৃহীত
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস-ইসরায়েল আলোচনায় অগ্রগতি আসেনি। হামাসের সমঝোতার বিষয়টি বারবার আটকে দিচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এতে দেশটির বেসামরিক লোকজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা বলছেন, নেতানিয়াহুর হাত রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়েছে। জিম্মি চুক্তি ও যুদ্ধবিরতিতে দ্রুত সমঝোতার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা।
এদিকে শনিবার (২৯ জুন) ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নেতা ওসামা হামদান লেবাননে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে জানান, আলোচনায় যেকোনও প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে নিতে প্রস্তুত রয়েছে হামাস।
এদিকে ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে জিম্মিদের রক্ষায় চুক্তি স্বাক্ষরের দাবি প্রকট হয়ে উঠেছে। এই দাবিতে দেশটির রাজধানী তেল আবিবে কয়েক লাখ বিক্ষোভকারী বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। পাশাপাশি ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনের দাবিও উঠেছে।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যেকোনও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানান হামাস নেতা হামদান। তিনি বলেন, “স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও অর্থবহ বন্দী বিনিময় সমঝোতা নিশ্চিত করবে- এমন যেকোনও ধরনের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে নিতে আবারও প্রস্তুত রয়েছে হামাস।”
যুক্তরাষ্ট্রসহ আরব মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি নিয়ে দু’পক্ষকে রাজি করাতে সফল হয়নি। এর জন্য ইসরায়েল ও হামাস একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। হামাস বলছে, যেকোনও ধরনের চুক্তিতে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিষয়টি থাকতে হবে। অন্যদিকে হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত শুধু সাময়িক অস্ত্রবিরতি মেনে নেওয়ার কথা বলে চলেছে ইসরায়েল। উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে গাজায় সরকার পরিচালনা করে আসছে হামাস।
ইসরায়েলের শর্ত মেনে নিতে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন হামদান। তিনি জানান, “মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে এখনও যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন কোনও প্রস্তাব পায়নি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।” এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনায় মিশরের গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া।

জিম্মি চুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ
গাজায় হামাসের কাছে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে অনতিবিলম্বে চুক্তি ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ করছেন বেসামরিক নাগরিকরা। আয়োজকরা জানান, দেশটির রাজধানী তেল আবিবে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার বিক্ষোভকারী জমায়েত হয়েছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে গাজায় হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে বক্তব্য রাখেন। একজন জিম্মির স্বজন মন্তব্য করেন, “বন্দী বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধ বন্ধ না করতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জেদ আমাদের ও আমাদের প্রিয়জনের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।”
গাজায় হামাসের হাতে বন্দী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ইয়োরাম মেৎসগারের (৮০) স্মৃতিচারণ করে নেতানিয়াহু তার পুত্রবধূ এল মেৎসগার বলেন, “যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অর্থ জিম্মিরা ইসরায়েলি সরকারের হাতে মৃত্যুবরণ করবে। আপনার হাত রক্তে রঞ্জিত। প্রতিবার শেষ মুহূর্তে সব সমঝোতা নস্যাৎ করে দেন নেতানিয়াহু। পরবর্তী চুক্তি আটকে দেওয়া থেকে অবশ্যই নেতানিয়াহুকে বিরত থাকতে হবে।”
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে হামাস। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। টানা ৯ মাস ধরে উপত্যাকাটিতে দেশটির অভিযান চলছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সেখানকার লোকজনের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।