প্যানডোরা পেপার্স: ‘নিঃস্ব’ অনিল আম্বানির বিদেশে ১৮ কোম্পানি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৪, ২০২১, ০২:০৯ পিএম

প্যানডোরা পেপার্স: ‘নিঃস্ব’ অনিল আম্বানির বিদেশে ১৮ কোম্পানি

ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির ছোট ভাই যিনি স্ত্রীর গয়নাবেঁচে লন্ডনে একটি মামলার খরচ যোগানোর কথা আদালতকে জানিয়েছিলেন, সেই অনিল আম্বানির বিদেশে গোপন ১৮টি কোম্পানি রয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে অলোড়ন সৃষ্টিকারী প্যানডোরা পেপার্স।

রবিবার (৩ অক্টোবর) ফাঁস হওয়া প্যান্ডোরা পেপারসের তথ্য অনুযায়ী, রিলায়েন্স এডিএ গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানি ও তাঁর প্রতিনিধিরা জার্সি, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ (বিভিআই) ও সাইপ্রাসে কমপক্ষে ১৮টি অফশোর কোম্পানির মালিক। এসব কোম্পানি ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্যানডোরা পেপার্সের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব কোম্পানির মধ্যে কমপক্ষে ৭টি কোম্পানির ১৩০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ও ঋণ রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জার্সিতে অনিল আম্বানির মালিকানাধীন ব্যাটিস্টে আনলিমিটেড, রেডিয়াম আনলিমিটেড ও হুই ইনভেস্টমেন্ট আনলিমিটেড নামে তিনটি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে তৈরি হয়।

প্যানডোরা পেপার্সের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে আরও বলা হয়, ব্যাটিস্টে আনলিমিটেড ও রেডিয়াম আনলিমিটেড এডিএ গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানি রিলায়েন্স ইনোভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানাধীন। হুই ইনভেস্টমেন্ট আনলিমিটেড এএএ এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের মালিকানাধীন, যা রিলায়েন্স ক্যাপিটালের একটি প্রোমোটার কোম্পানি।

প্রতিবেদেনে আরও বলা হয়, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জার্সিতে সামারহিল লিমিটেড ও ডুলউইচ লিমিটেড নামে আরও দুটি কোম্পানির মালিক অনিল আম্বানির প্রতিনিধি অনুপ দালাল।

অথচ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনের আদালতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে অনিল আম্বানি বলেন, তার অবস্থা বর্তমানে এতটাই খারাপ, যে তাকে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। একদা রিলায়েন্স গ্রুপের সহকর্তা অনিল ছিলেন বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি। কিন্তু এখন তিনি একেবারেই রোজগারহীন।

লন্ডনের এক আদালতে শুনানির সময় মুম্বাইতে বসে ভিডিও লিংকে আইনজীবীদের জেরার মুখে যেসব তথ্য তিনি দিয়েছেন, তাতে তিনি দাবি করেছেন, সঞ্চিত অলংকার বেচে এখন তাকে আইনজীবীর বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

অনিল আম্বানি এর আগে দাবি করেছিলেন তার সম্পত্তির পরিমাণ এখন 'নেট জিরো', অর্থাৎ শূন্যে নেমে এসেছে। তবে প্যানডোরা পেপার্সে তার ১৮টি কোম্পানি থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।

তদন্তমূলক সাংবাদিকতার সৌজন্যে বিশ্ব জুড়ে ডাকসাইটেনেতা, মন্ত্রী থেকে সেলিব্রিটি প্রত্যেকের আর্থিক খুঁটিনাটি ফাঁস করেছে এই প্যানডোরা পেপার্স। দুবাই, পানামা, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে বিশ্বের তাবড় প্রভাবশালীরা যে অর্থ বা সম্পদের লেনদেন করেছেন গোপনে, তার সব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।

প্যানডোরা পেপার্স কী

বিশ্বের শক্তিধর নেতা, প্রেসিডেন্ট, রাজনীতিবিদদের গোপন তথ্য ‘প্যানডোরা পেপার্স’ নামে ফাঁস বা উদঘাটন করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। এই সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন ব্রিটেনের বিবিসি এবং দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্র এবং ভারতের 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'সহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের ৬ শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী। এসব গণমাধ্যম দাবি করেছে এক কোটি ১৯ লাখ দলিলপত্র তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স ইত্যাদি নামে গত ৭ বছর যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে, এই প্যানডোরা পেপার্স হচ্ছে তার সবশেষ ঘটনা।

 

Link copied!