জুন ৪, ২০২৩, ০২:৪২ পিএম
ভারতের ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক হা্জারের বেশি যাত্রী। করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
তবে ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং পরিবর্তনের কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ভারতীয় এই রেলমন্ত্রী আরও জানান, রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করেছেন। ঘটনার কারণ এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর আগে, রেল কর্তৃপক্ষের রিপোর্টে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, ‘আপ মেইন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। তবে ট্রেনটি সেই লাইনে না প্রবেশ করে লুপ লাইনে প্রবেশ করেছিল। লুপ লাইনে আগে থেকে একটি মালগাড়ি ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। ওই মালিগাড়ির সাথে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।’
ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়, “এর মাঝে ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।’তবে মেইন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কীভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে, দুর্ঘটনার দুদিন পার হলেও রেল ট্র্যাকটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে বুধবারের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে বলে রেলমন্ত্রী জানান।
ওপরদিকে, ওড়িশা সরকার জানিয়েছে এখন পর্যন্ত ১৬০টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। ওড়িশার একটি অস্থায়ী মর্গে ১০০টি মরদেহ রাখা হয়েছে। করমণ্ডল দুর্ঘটনায় যে সব যাত্রী নিখোঁজ তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা আসছেন সেখানে। নিখোঁজের পরিচয় জানানোর পর মিলিয়ে দেখা হচ্ছে ছবি। প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেহ দেখে চিহ্নিত করতে পারলে তখনই তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুপুর সোয়া ৩টা নাগাদ হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় চার ঘণ্টা পরে ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ বগির ট্রেনটি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে,কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ডাউন লাইনে ছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ওড়িশার বাহানগাবাজার এলাকায় এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মিনিট পাঁচেক পর আপ লাইন দিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিল চেন্নাইগামী শালিমার–চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হঠাৎ এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
এ সময় পাশের একটি লাইনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালবাহী একটি ট্রেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে প্রথমে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিতে আঘাত করে। পরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রেনের ওপর গিয়ে আছড়ে পড়ে।
দীর্ঘ ৪২ বছর পর এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো ভারতকে। ১৯৮১ সালে বিহারে সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে সোজা নদীতে পড়ে ৭৫০ জনের মৃত্যুর সাক্ষী ছিল দেশটি।