দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষেক হলো তৃতীয় চার্লসের। সাম্রাজ্যের দায়িত্ব পালন করে আসছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর থেকেই। রাজমুকুট পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করলেন আজ ৬ মে। ১৩০০ কোটি টাকারও অধিক খরচের জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য গ্রহণ করে নিলো নতুন রাজা-রাণীকে। এই খরচ জোগাচ্ছে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় কোষাগার, অর্থাৎ জনগণের অর্থ।
চার্লসের রাজ্যাভিষেকের পাশাপাশি, এ দিন তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা সরকারিভাবে হলেন 'কুইন কনসর্ট'। গণমাধ্যমগুলোর দাবি, যদিও রাণীর মাথায় মুকুট উঠেছে, তবুও সেই আয়োজন রাজা চার্লসের পর্বের মতো ততটা জৌলুসপূর্ণ ছিল না।
এর কারণ হতে পারে, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের প্রিন্সেস ডায়ানার প্রতি ভালোবাসা। ডায়ানা বেঁচে থাকলে আজ তিনিই হতেন যুক্তরাজ্যের রাণী। ডায়ানার আকাশ্চুম্বী জনপ্রিয়তা, তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্স এবং বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন, চার্লসের ক্যামিলার সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক পরবর্তী সময়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ডায়ানা।
এরপরই কমতে শুরু করে ব্রিটেন রাজপরিবারের জৌলুশ। সাথে ডায়ানার স্বামী চার্লসকে ভবিষ্যত রাজা হিসেবে গ্রহণের আকাঙ্খা। ডায়ানা মারা যাওয়ার ৯ বছর পর বিয়ে হয় চার্লস-ক্যামিলার।
প্রায় ১ হাজার বছর ধরে চলছে গ্রেট ব্রিটেন রাজতন্ত্র। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের তরফে মাঝেমধ্যে আপত্তি শোনা যায় বটে। তবে ইংল্যান্ড হাসিমুখেই রাজতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী।
১৯৩৭ সালে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষেক হয়েছিল রাজা ষষ্ঠ জর্জের। তার পর চার্লসই প্রথম রাজা ব্রিটেনের। কারণ ১৯৫৩ সালে অভিষেকপর্ব থেকে ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, মৃত্যু পর্যন্ত সিংহাসনে ছিলেন, ষষ্ঠ জর্জের কন্যা তথা চার্লসের মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর মৃত্যুর পর, ৭৪ বছর বয়সে, রাজা হিসেবে ব্রিটেনের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন চার্লস।
৭৪ বছর বয়সে চার্লসের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে উৎসব চলছে ব্রিটেন জুড়ে। দেশ-বিদেশের স্বনামধন্যরা হাজির হয়েছেন সেখানে। ২ হাজারের অধিক ভিআইপি অতিথিসহ প্রায় ৮ হাজার অতিথির সমাগম ঘটেছে এ আয়োজনে। এ ছাড়াও রাস্তায় নেমে আসে জনসমুদ্র। টিভির পর্দায় চোখ আটকে ছিল সাধারণ নাগরিকদের। ঘোড়ার গাড়িতে চেপে, কড়া নিরাপত্তায় মোড়া পরিস্থিতিতে এ দিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে পৌঁছান চার্লস এবং ক্যামিলা। রীতিনীতি মেনে শুরু হয় রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান।
শোনা যায়, ঢের আগেই ছেলেকে সিংহাসন ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কিন্তু চার্লসের ভাবমূর্তি নিয়ে ভীত ছিলেন তিনিও। রাজ পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন রানি। শেষ মেশ গত বছর তাঁর মৃত্যুর পরই রাজা হন চার্লস। তবে এখনও বিতর্ক রয়েছে তাঁকে ঘিরে। সময়ের সাথে তাঁর এবং ক্যামিলার সম্পর্ক ব্রিটেনবাসী মেনে নিলেও, ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগানের সাথে সংঘাত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন চার্লস।
করোনা পরবর্তী চলমান অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে আলিশান রাজপ্রাসাদ, রাজবংশীয়দের বিলাসী জীবন ও রাজার রাজ্য কিভাবে পরিচালিত হয় এখন শুধু সেটিই দেখার অপেক্ষা।