৮০ বছরেও ‌‌‘যুবক’ যে গ্রামের মানুষ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২১, ১২:১৫ এএম

৮০ বছরেও ‌‌‘যুবক’ যে গ্রামের মানুষ

ওগিমি নামে জাপানের একটি গ্রামে ৮০ বছর বয়সীদেরও তরুণ ধরা হয়। কারণ গ্রামটির বেশির ভাগ মানুষ ১০০- ১১০ বছর পর্যন্ত সুস্থ ও প্রাণবন্তভাবে বেঁচে থাকেন!

প্রশ্ন আসতেই পারে গ্রামের অধিবাসীদের এই দীর্ঘ ও সুখি জীবনের রহস্যটা কী? উত্তর হলো ইকিগাই। ইকিগাই মানে ‘অর্থবহ জীবন’। গ্রামবাসীদের মধ্যে রয়েছে ইকিগাই মেনে চলার সুঅভ্যাস। তাদের অভ্যাসে রয়েছে বেশ খানিকটা মিল। তারা বার্ধক্যকে সরিয়ে কর্মচঞ্চলতা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। 

এখানকার অধিবাসীরা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন। হাঁটাহাঁটি করেন। তারা কাজ করার সময় যতটা ভালো করে করা যায়, সেটার চেষ্টা করেন। ফাস্ট ফুডের বদলে ফলমূলকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। পর্যাপ্ত ঘুমান এবং খাবারে পরিমাণে অনেক কম লবণ খান। তারা রুটিন মাফিক কাজ করেন। নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। গ্রামের এই মানুষের কাছ থেকে ইকিগাইয়ের ১০টি নিয়ম জানা যায়। তাদের ধারণা এই নিয়মগুলো অনুসরণের মাধ্যমে দীর্ঘ ও সুখি জীবনের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

১. অবসর নয়: সবসময় এক্টিভ থাকুন: সাধারণত যারা অবসরে যান, তারা দ্রুত জীবনের অর্থ হারিয়ে ফেলেন। এজন্য একটা কিছু চালিয়ে যেতে হবে। বারবার নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। এতে জীবনে আসবে উদ্দীপনা। জীবন হবে অধিকতর সুন্দর। আবার অন্যদের জীবনও প্রভাবিত হবে।

২. ধীরস্থির থাকুন: তাড়াহুড়ো করলে জীবনে আসতে পারে চরম বিতৃষ্ণা। প্রাণশক্তি যেতে পারে হারিয়ে। একটা পুরনো প্রবাদকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, ‘ধীরে হাঁটুন। অনেক দূর যেতে পারবেন।’

৩. পেটভর্তি না খাওয়া: খাওয়ার বেলায় সবসময় কম খেতে হবে। পাকস্থলীর ৮০ শতাংশ পরিমাণ খাবার খাওয়া। ক্ষুধা লাগলেই গলা পর্যন্ত খাওয়া যাবে না। চাহিদার তুলনায় অবশ্যই কিছু কম খান। শরীর তো সুস্থ থাকবেই তার পাশাপাশি বেশি দিন বাঁচবেন।

৪. পাশে থাকুক ভালো বন্ধুরা: বন্ধুরা হলো আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঔষধ। মন ভালো নেই? বন্ধুর সাথে আড্ডা দিন। মনের চেপে রাখা কথাগুলো বলে ফেলুন। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিন, মজা করুন। দিনটা রঙিন হয়ে উঠবে।

৫. পরের জন্মদিনের জন্য প্রস্তুতি: একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? পানি তখনই ভালো থাকে, যখন প্রবাহিত থাকে। কিন্তু যখন পানিকে আবদ্ধ করে রাখা হয়, দুর্গন্ধ ছড়ায়। আপনার বডি হলো পানির মতো। হাঁটুন, দৌড়ান, ঘুরে বেড়ান। প্রাণ শক্তি ফিরে পাবে।

৬. হাসুন: হাসি যেমনি আপনাকে ভালো রাখবে, ঠিক তেমনি বন্ধু বাড়াতেও হেল্প করবে। রাশভারি মানুষের সাথে নিশ্চয় কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না, তাই না? সবকিছু সবসময় আপনার মনের মতো হবে না। তারপরেও পৃথিবীতে যে এসেছেন বা বেঁচে আছেন, সেটাও বিশাল বড় প্রাপ্তিগুলোর একটি। সম্ভাবনাময় জীবন রয়েছে আপনার অপেক্ষায়।

৭. প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখুন: মানুষ প্রকৃতিরই অংশ। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন, বিভিন্ন অজুহাতে সেই আমরাই প্রকৃতি থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছে যান। ব্যাটারি তো রিচার্জ করতে হবে।

৮. ধন্যবাদ দিন: পূর্বপুরুষের হাত ধরে এই পৃথিবীর মুখ দেখেছেন। প্রকৃতির কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছেন এত দিন। নানা মানুষের নানা সময় নানা সহযোগিতা পেয়ে এত দূর এসেছেন। খাচ্ছেন, ঘুরছেন, গল্প করছেন। আনন্দেই আছেন বেশ। দেখুন, প্রতিটি ধাপে আমরা কারও না কারও কাছে ঋণী। ধন্যবাদ দেবার জন্য দিনের একটা সময় বেছে নিন। দেখবেন আনন্দের পারদ বেড়েই চলেছে।

৯. বর্তমানে বাঁচুন: অতীত? অনেক আগে চলে গেছে। আর ভবিষ্যত? এখনো আসেনি। দরকার নেই সেসব নিয়ে চিন্তা করার। বর্তমানে আছেন, সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। এমনভাবে কাজে লাগান, যাতে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা না থাকে।

১০. ইকিগাইকে অনুসরণ করুন: প্রত্যেক মানুষই বিশেষ গুণসম্পন্ন। রয়েছে বিশেষ সক্ষমতা, যা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। জীবনকে অর্থবহ করে। সাহায্য করে আপনার সেরাটা দিতে। যদি এখনো না জেনে থাকেন আপনার ইকিগাই কী, তাহলে ভিক্টর ফ্রাংকেলের ভাষায়, আপনার কাজটি খুঁজে বের করুন।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ে ফেলতে পারেন হেক্টর গারসিয়া ও ফ্রান্সেস মিরালেসের লেখা ‘ইকিগাই’ বইটি।

Link copied!