১৪ দলের মতের ভিত্তিতেই জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার: ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ৩০, ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম

১৪ দলের মতের ভিত্তিতেই জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার: ওবায়দুল কাদের

যৌথ সভা শেষে ওবায়দুল কাদের। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের মতামতের ভিত্তিতে সরকার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।”

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এই যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ সভার শুরুতে সংঘাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া পরিচালনা করা হয়। পরে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন নেতারা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের যে মতামত দিয়েছেন, সেটা আইনগত দিক ভালোভাবে দেখে সরকার বাস্তবায়ন করবে। যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামায়াত স্বাধীন দেশে আর রাজনীতির কোনও সুযোগ না পায়।”

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য দীর্ঘ দিন থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা, নাগরিক সমাজ দাবি করে আসছে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক)’ সে সময় গঠিত গণআদালত, পরবর্তীতে গণজাগরণ মঞ্চের দাবিও ছিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা। এ ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়েছে।”

যৌথ সভা শেষে ওবায়দুল কাদের
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন না থাকলে কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন নজির আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের নাৎসি পার্টি রাজনীতি করতে পারেনি জার্মানিতে।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, “সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে কোনো নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। অতি উৎসাহী হয়ে যাতে নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে- কোথায় বৈঠক হয়েছে, কোথা থেকে নির্দেশ এলো আর অর্থের জোগান কীভাবে হয়েছে? সব ষড়যন্ত্র এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। জাতিকে বিভ্রান্তের সুযোগ আর নেই।”

যৌথ সভা শেষে ওবায়দুল কাদের
যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের কাছে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে সবাই নিরপরাধী। তবে প্রশ্ন এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাল কারা? কারা অগ্নি সংযোগ করল? কারা রাষ্ট্রের সম্পদ ভস্মীভূত করল? আজ বাংলাদেশে যে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এগুলো কারা করেছে? আজ কথায় কথায় সরকার ও আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা হয়।”

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কয়েক দিন যে সহিংসতা হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিল। সশস্ত্রদের দ্বারা তারা হামলার শিকার হয়েছে। এই ঘটনা প্রবাহে আমরা আক্রান্ত, আক্রমণকারী নই।”

যৌথ সভা শেষে ওবায়দুল কাদের
যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

বিরাজমান পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগর, সব জেলা সদর, সব উপজেলা, থানা-ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীদের কারফিউ মেনে চলার আহ্বান জানান ও নেতাকর্মীদের সতর্ক প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে গুজব-আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং এমন কিছু পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!